আসানসোল: গিয়েছিলেন ছুটি কাটাতে। কিন্তু ফিরে আসতে হল কফিনবন্দি হয়ে। কেউ কলেজের অধ্য়াপিকা, কেউ স্টিল প্ল্য়ান্টের বড় আধিকারিক। কেউ আবার সিপিএমের সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য়। উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃত্যু হল পশ্চিম বর্ধমানের ৫ পর্যটকের। মৃতদের নাম কিশোর ঘটক (৫৯), তিনি রানিগঞ্জের বাসিন্দা। আসানসোলের শ্রাবণী চক্রবর্তী(৫৫,) দুর্গাপুরের সুব্রত ভট্টাচার্য্য (৬১) ও তাঁর স্ত্রী রুনা ভট্টাচার্য্য (৫৬) ও রানিগঞ্জের চন্দনা খান ভট্টাচার্য্য (৬৪)।
উত্তরাখণ্ডের মুরকেয়ারি থেকে কৌশানি যাওয়ার পথে যে ১২ জন পর্যটকের গাড়ি খাদে পড়ে যায়। তাঁদের মধ্যে মৃত্যু হয় ৫ জনের ও আহত হন ৭ জন। বুধবার দুর্ঘটনার পর সবাইকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল স্থানীয় কাপোকট স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। সেখান থেকে স্থানান্তরিত করা হয় বাগেশ্বর জেলা হাসপাতালে।
বৃহস্পতিবার বাগেশ্বর জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে পাহাড় থেকে সবাইকে নামিয়ে নিয়ে আসেন। এরপর কফিনবন্দি করে দেহ পাঠানো হবে পশ্চিম বর্ধমানে। ৩০ জন পর্যটকের মধ্যে ট্র্যাভেলার্স-সহ আসানসোলের মহিশীলা কলোনীর বাসিন্দা রয়েছেন ১০ জনের মত। যাঁদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে শ্রাবণী চক্রবর্তীর। কম বেশি আহত হয়েছেন প্রায় প্রত্যেকেই।
শোকের ছায়া নেমে এসেছে রানিগঞ্জেও। রানিগঞ্জের সিয়ারশোলের বাসিন্দা কিশোর ঘটক ছিলেন এলাকার ‘মিশুখে দাদা’। তিনি ছিলেন সিপিএম পার্টির সদস্য। ছিলেন সিটুর সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য। ইসিএলে কাজ করতেন। অবসর নেওয়ার পর প্রথম তিনি বেড়াতে গিয়েছিলেন।
রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজের লাইব্রেরিয়ান ছিলেন চন্দনা খান ভট্টাচার্য্য। তিনি স্বামী তাঁর ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ড বেড়াতে। দুর্ঘটনায় চন্দনা দেবীর স্বামী শুধু বেঁচে রয়েছেন। কিন্তু মৃত্যু হয়েছে চন্দনা, দুর্গাপুরের বাসিন্দা ভাই সুব্রত ভট্ট্যাচার্য্য ও তাঁর স্ত্রী রুনা ভট্টাচার্য্যের।
দুর্ঘটনার কবলে পড়া অন্য পর্যটকদের উদ্ধারের জন্য ততপর রানিগঞ্জের বিধায়ক তথা মহিশীলার বাসিন্দা তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “রাতভর বাগেশ্বর প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পর্যটকদের উদ্ধার করা হয়। ট্র্যাভেলারকে পুলিশ ভুল করে আটক করেছিল। তাঁকে রিলিজ করানো হয়। তারপর সবার রিলিফের ব্যবস্থা করা হয়। এবার তাঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি বলেন, “উত্তরাখণ্ডের চিফ সেক্রেটারির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম। পর্যটকদের পাশে থেকে বাড়ি ফেরানোর ও সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে। ২১ তারিখ বেরিয়ে মুরকেয়ালি, নৈনিতাল, কৌশানী ঘুরে ৩০ তারিখ ফেরার কথা ছিল পর্যটকদের। সবাইকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে তার আগেই। তত্পরতার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।”
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীবারে সেঞ্চুরি পার ডিজেলের, নিজের মান বজায় রেখেছে পেট্রোলও!
আরও পড়ুন: আর একটু হলেই বরফের নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছিল শরীরগুলো! নিখোঁজ ৩ ট্রেকারের দেহ