উত্তর দিনাজপুর: ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে কবরস্থান সংস্কারের নামে ভুয়ো মাস্টার রোল দেখিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাত্ করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল (TMC) পঞ্চায়েত সদস্য়দের বিরুদ্ধে। ঘটনায়, চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ইটাহারের সুরুন গ্রামে।
স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এলাকার একটি কবরস্থানের সংস্কারের জন্য় দীর্ঘদিন ধরে নিজ উদ্যোগে টাকা দিয়ে কাজ করছিলেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু, সুরুন ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল (TMC) সদস্য় মাজেদা খাতুন নিজেই ১০০ দিনের কাজের নামে একটি ভুয়ো মাস্টাররোল তৈরি করেন বলে অভিযোগ। তারপর, সেই ভুয়ো মাস্টাররোলের মাধ্য়মে ৩ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা আত্মসাত্ করেন বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদেরও আরও অভিযোগ, ওই তৃণমূল নেত্রী আগেও নানারকম দুর্নীতি করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ তোলা হলেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। এ বার সরাসরি ভুয়ো মাস্টাররোল সেকশন তৈরি করায় প্রায় হাতেনাতে ধরা পড়েন ওই তৃণমূল নেত্রী। ফলে, এবার সরাসরি জেলাশাসক ও মহকুমা শাসক ও ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের কাছেই লিখিত দিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
আব্দুল মাজিদ নামে এক গ্রামবাসীর কথায়, “আমার ঠাকুর্দা ও বাবা-কাকাদের জমিতে এই কবরস্থান। সেই কবরস্থান সংস্কারের জন্য আমরাই মাটি জোগাড় করে মাটি ফেলেছি। এই পুরো মাটি আমাদের কেনা। কিন্তু, ওই পঞ্চায়েত সদস্যা মাজেদা খাতুন নিজে একটা ভুয়ো মাস্টাররোল তৈরি করেছে। সেই মাস্টাররোলের মাধ্যমে ৩লক্ষ ২৪ হাজার টাকা হাতিয়েছে। ওই তৃণমূল নেত্রী নির্দল প্রার্থী হয়ে জিতে এসে পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তৃণমূলে যোগ দেন। আমরা বাধ্য হয়ে আজ জেলাশাসককে লিখিত দিয়েছি।” ঘটনার পুর্ণাঙ্গ তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পঞ্চায়েত অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসীরা।
ইটাহারের সহযোগী ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক জাহেরুল ইসলামের কথায়, “আমরা আগেও বিভিন্ন সময়ে ওই পঞ্চায়েত সদস্য়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু, পর্যাপ্ত প্রমাণ না পেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও কোনও পদক্ষেপ করা যায়নি। তবে এ বার হাতেনাতে প্রমাণ পেয়ে আমরা তদন্ত করব। অতিদ্রুত দোষীর শাস্তি হবে।” কিন্তু প্রশ্ন উঠছে পঞ্চায়েত প্রধানের নজর এড়িয়ে কী করে এইভাবে তৃণমূল নেত্রী ভুয়ো মাস্টাররোল তৈরি করলেন? ঘটনায় পঞ্চায়েত প্রধান অনিতা দাস বলেন, “আমার কাছে এধরনের কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে বিডিও-র তরফে খবর পেয়েছি। যদি, তেমন কিছু হয়ে থাকে তবে নিঃসন্দেহে তদন্ত করা হবে। তদন্ত হলেই দোষীর শাস্তি হবে।” যদিও, অভিযুক্ত তৃণমূল নেত্রী কোনও মন্তব্য করেননি।
ঘটনায় বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার টেলিফোনে বলেন, “এ রাজ্যে সব সম্ভব। কাটমানি থেকে শুরু করে দুর্নীতি সব ক্ষেত্রেই আমরা সরব হয়েছি। চাইছি, প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে দ্রুত তদন্ত করুক। আর দোষীদের উপযুক্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক। সরকারি টাকা তছরুপ কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এসবের পেছনে বড় রাঘব বোয়ালরা থাকতে পারেন, তদন্তে তাঁদের সবার নাম সামনে আসবে।” আরও পড়ুন: ‘উদাসীন রাজ্য সরকার, নিষ্ক্রিয় পুলিশ’, হাইকোর্টে রিট পিটিশন জমা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের