উত্তর দিনাজপুর: এমন একটা গ্লাভস, যা পড়ে কিছু স্পর্শ করলেই ১০ হাজার ভোল্টের কারেন্ট! আর এমন এক স্টিক, যার শরীর কাঁটায় ভর্তি। নতুন বছরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য নতুন উপহার রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রতিপক্ষকে ঠেকাতে সেনাবাহিনীর জওয়ানদের ব্যবহারের জন্য অভিনব স্মার্ট গ্লাভস ও স্মার্ট স্টিক বানিয়ে নজরে উঠে এল রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিদ্যা বিভাগের পড়ুয়ারা। সম্প্রতি ভারত, চিন সীমান্তে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে যে ধস্তাধস্তি হয়, তার প্রেক্ষিতেই তাঁদের এমন অভিনব আবিষ্কার বলে জানালেন পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এই গ্যাজেটর পেমেন্ট পেতে আবেদন করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
পড়ুয়াদের দাবি, এই স্মার্ট গ্লাভস ও স্টিক গুলোতে এক মুহূর্তে ১০ হাজার ভোল্টের ইলেকট্রিক শক লাগবে। এতে বিপক্ষের আক্রমণকারীরা ধরাশায়ী হয়ে পড়বে। সাধারণ গ্লাভস ও জলের পাইপকে এভাবে ব্যবহার করায় বাইরে থেকে সাধারণ লাঠি মনে হলেও এটা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে, সে বিষয়ে একমত পড়ুয়ারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস চলার ফাঁকে তাঁদের এই অভিনব আবিষ্কার যে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনেকটাই উপকৃত করবেন, সেবিষয়ে তারা ভীষণ আশাবাদী। স্মার্ট গ্লাভস ও স্মার্ট স্টিকের কার্যকারিতা দেখানোর সময়ে পড়ুয়ারা বলেন, এই গ্লাভসগুলো দেখতে সাধারণ। কিন্তু এতে ব্যাটারি চালিত শক্তি তৈরি করার ক্ষমতা আছে। যা দিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা কাছাকাছি আসা আক্রমনকারীদের শক স্টিক ও শক গ্লাভস দিয়ে সরাতে পারবে।
এছাড়াও স্টিকটির ভেতরে থাকবে কাঁটা তার, সেটাকেও বিপক্ষকে কাহিল করতে পারবে, কারণ কাঁটাতারের সঙ্গে সঙ্গে ইলেকট্রিক শকও দেওয়া যাবে। সবশেষে এর মধ্যে লুকানো থাকবে শক্তিশালী চাকু, যা সেনার আত্মরক্ষার কাজে আসতে পারে। এগুলো তৈরি করতে খরচের বিষয়ে পড়ুয়ারা বলেন, “গ্লাভস গুলোর খরচ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, আর স্টিক তৈরির খরচ সবমিলিয়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পড়তে পারে। এতে যেমন সেনাবাহিনীর খরচ বাঁচবে, তেমনি বিপক্ষকে ঘায়েল করাও সম্ভব হবে।”
পড়ুয়াদের এই পরিকল্পনায় যার অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি হলেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিদ্যা বিভাগের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট বাপ্পা রায়। তাঁদের এই নতুন দুই গ্যাজেটে যে অভিনবত্ব আছে, সেটা জানিয়ে অধ্যাপক বলেন, “এটা ভীষণ কার্যকরী অস্ত্র হিসেবে সীমান্ত এলাকায় এবং পুলিশ কর্মীদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। দেখতেও সাধারণ, পাশাপাশি এটা তৈরির খরচও কম।”
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডঃ দুর্লভ সরকার বলেন, “পদার্থ বিদ্যার পড়ুয়ারা মাঝেমধ্যেই এমন অভিনব প্রয়াস করে থাকেন। আমরা আমাদের ছাত্র ছাত্রীদের সবসময়ই নতুন কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে সহযোগিতা করি। বিভিন্ন ফান্ডিং এজেন্সিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে এই গ্যাজেট নিয়ে নিরীক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”