North Dinajpur: প্রশাসনের নাকের ডগাতেই ‘চুরি’ হয়ে যাচ্ছে আস্ত নদী, মাফিয়াদের স্বর্গরাজ্যে টিভি ৯ বাংলা
North Dinajpur: রায়গঞ্জ ব্লক আর করনদিঘি ব্লকের মধ্যেকার সীমানা এই নাগর নদী। সেই নাগরের দুই ধারেই মাটি আর বালি মাফিয়ার স্বর্গ রাজ্য। সবটাই দেখেন গ্রামের সাধারণ কৃষক, কিন্তু তাঁদের দেখতে মানা, মুখ খুলতে মানা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সব জানেন রাজনৈতিক নেতারাও।
রায়গঞ্জ: বালি মাফিয়াদের স্বর্গরাজ্যে টিভি নাইন বাংলা। অভিযোগ, নাগর নদীতে প্রকাশ্য দিবালোকে চলছে বালি-মাটি মাফিয়াদের কারবার। নদীর বুক থেকে জেসিবি দিয়ে বালি-মাটি তুলে ডাম্পার-ট্র্যাক্টর দিয়ে হয়ে যাচ্ছে পাচার। গতিপথ বদলাচ্ছে নাগর, জমিহারা কৃষকরা। আতঙ্কে এলাকার বাসিন্দারা। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না বলে দাবি। জাতীয় সড়ক থেকে দৃশ্যমান রায়গঞ্জ ও করনদিঘি ব্লকের সীমান্তে প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই দিনের পর দিন কিভাবে চলছে এই কারবার? উঠছে প্রশ্ন।
এদিকে লাগাতার মাটি আর বালি মাফিয়ার দৌরাত্ম্যে স্বাভাবিক গতিপথ বদালাচ্ছে নাগর নদী। কোথাও চাষের জমি হারিয়ে, কোথাও বাসস্থান হারিয়ে হয়রান হচ্ছে সাধারণ গরিব কৃষক। অভিযোগ উঠছে প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নদীর বুক থেকে বালি-মাটি চুরি হয়ে যাচ্ছে, অথচ কেউ কিচ্ছু বলছে না, প্রশাসনও নীরব। কেন সবাই সব দেখেও চুপ করে আছে, সেই কারণ খুঁজতে টিভি নাইন বাংলা পৌঁছে গিয়েছে সেই বালি মাফিয়াদের স্বর্গরাজ্যে।
রায়গঞ্জ ব্লক আর করনদিঘি ব্লকের মধ্যেকার সীমানা এই নাগর নদী। সেই নাগরের দুই ধারেই মাটি আর বালি মাফিয়ার স্বর্গ রাজ্য। সবটাই দেখেন গ্রামের সাধারণ কৃষক, কিন্তু তাঁদের দেখতে মানা, মুখ খুলতে মানা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সব জানেন রাজনৈতিক নেতারাও। বিরোধী দলের নেতারা শাসক দলকে দোষ দেয়, শাসকদল পদক্ষেপের আশ্বাস দেয়। কিন্তু কেউ কোনও পদক্ষেপ করে না। যেখানে কাজ হয় সেখানে নেই সংবাদমাধ্যমের ‘প্রবেশাধিকার’। কিন্তু, সেই খবর পেয়ে আমরা পৌছে গিয়েছিলাম গ্রাউন্ড জিরোতে। যদিও গ্রামবাসীরা সেখানে যেতে বারবার নিষেধ করেছিল। রায়গঞ্জ ব্লকের জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মকদমপুর গ্রামের মেঠো রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম নাগরের তীরে। ক্যামেরায় ধরা পড়লো নাগর নদীর উত্তর পাড়ে যেদিকে করণদিঘি সেখানে জেসিবি আর ডাম্পারের দৌরাত্ম্য। শুকিয়ে যাওয়া নাগর নদী কেটে ফেলার দৃশ্য একদম পরিষ্কার দেখা গেল ক্যামেরায়।
১২ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া এলাকায় প্রকাশ্যে জেসিবি দিয়ে চলছে মাটি কাটা। লোড হচ্ছে ডাম্পারে। প্রশ্ন উঠছে যে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে জেলা শাসক থেকে জেলা প্রশাসনের কর্তারা হামেশা যাতায়াত করছেন, যে জাতীয় সড়ক ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই জেলার দুই মহকুমায় যাতায়াতের। সেই জাতীয় সড়ক লাগোয়া এলাকায় কিভাবে দিনের আলোতে চড়ার মরশুমে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নাগর নদীর মাটি আর বালি কেটে সাফ করছে মাফিয়ারা? উত্তর খুঁজতে আমরা গিয়েছিলাম রাজনৈতিক নেতাদের কাছে। তাঁরা জানালেন তাঁরাও জানেন সবটা। বিরোধী বিজেপি সোজা সাপটা দোষ চাপালেন শাসকদলের কাঁধে। অন্যদিকে শাসকদলের নেতারা আবার অভিযোগ তুললেন দুষ্কৃতীদের দিকে।
সব থেকে ভয়ঙ্কর তথ্য দিলেন জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। তিনি জানালেন নাগর ধীরে ধীরে তার গতিপথ বদলেছে। কোথাও নাগরের দক্ষিন পাড়ে রায়গঞ্জের দিকে চলে এসেছে করনদিঘি ব্লকের জমি। আবার কোথাও নাগরের উত্তরদিকে নাগরের পাড়ে করনদিঘি ব্লকের দিকে চলে গেছে রায়গঞ্জের জমি। প্রশাসনের কাছে যার পরিষ্কার কোন ম্যাপ নেই। ফলে করনদিঘির দিকে থাকা রায়গঞ্জের জমিতে মাফিয়ারা জেসিবি আর ডাম্পার দিয়ে দেদারে কারবার চালাচ্ছে। প্রধানের কথায়, নতুন করে জমি জরিপ করে রায়গঞ্জ আর করনদিঘি ব্লকের নয়া সীমানা খুজে দিতে পারলে সমস্যা মিটতে পারে। এখন কবে এই জরিপ হয়, বা এতে মাফিয়া দৌরাত্ম্য বন্ধ হয় কিনা তা সময় বলবে।