পশ্চিমবঙ্গ: উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু হয়েছিল। জ্বরের (Unknown Fever) প্রকোপ বাড়তে বাড়তে দক্ষিণবঙ্গেও ছড়িয়েছে সংক্রমণ। শনিবার রাজ্যে ফের মৃত্যু হল দুই শিশুর। মালদায় জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিল এক ৫ মাসের শিশু। শনিবার সকালেই তার মৃত্যু হয়। কিন্তু, মৃত্য়ুর কারণ কী তা নিয়ে স্পষ্ট কোনওকিছুই বলতে পারছেন না চিকিত্সকেরা। অন্যদিকে, হেমতাবাদের ইসলামপুরের বাসিন্দা রিনা সেন নামে এক নাবালিকার মৃত্যু হয়েছে এই অজানা জ্বরের প্রকোপেই। তবে তার মৃত্যু নিয়ে নানা মুনির নানা মত! কেউ বলছেন হার্ট অ্যাটাক, কেউ বা বলছেন হাই সুগার! মৃত্যু নিয়ে এ হেন বিভ্রান্তি কেন অভিযোগ মৃতার পরিবারের। রাজ্যে এই মুহূর্তে অজানা জ্বরে মৃত্যু হল মোট ১১জন শিশুর।
রাজ্য জুড়ে অজানা জ্বরের এই দাপটকে ‘মরসুমি জ্বর’ বলেই ব্যাখ্যা করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। আশ্বাস দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জ্বরের প্রাদুর্ভাব নিয়ে অবশেষে মুখ খুলেছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “বছরের এ সময় প্রতিবারই শিশুদের মধ্যে ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যায়। এ বছর সংখ্যাটা বেশি। তার মানে এই নয় যে কিছুই ঘটেনি। রোগ যখন হচ্ছে। শিশুদের আইসিইউয়ে ভর্তি যখন করতে হচ্ছে তখন কিছু একটা কারণও নিশ্চিত রয়েছে।” পাশাপাশি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর কী কী পদক্ষেপ করতে চলেছে তাও স্পষ্ট করেন স্বাস্থ্য় অধিকর্তা।
রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, জ্বরের কারণ খুঁজতে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভাইরাস প্যানেলে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি, উপসর্গের নিরিখে কী ধরনের চিকিৎসা করতে হবে সেই সংক্রান্ত প্রোটোকল বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করছে। দ্রুত তা জেলাস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ভাইরাল প্যানেলে পরীক্ষা খরচসাপেক্ষ। তাই কোভিড, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, স্ক্রাব টাইফাস ধরা না পড়লে ভাইরাস প্যানেল করতে বলা হয়েছে। পিএম কেয়ার্সে পাওয়া ভেন্টিলেটরকে পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর, হাই ফ্লো ন্যাজাল অক্সিজেন মাস্কে রূপান্তরিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাড়তি HFNO দেওয়া হচ্ছে।
অজানা জ্বরের সব আপডেট দেখুন এক নজরে
কলকাতা: কোনও অজানা জ্বর নয়। ব্য়াপক হারে এই সংক্রমণের নেপথ্যে রয়েছে আরএসভি অর্থাত্ রেসপিরেটরি সিনসিশাল ভাইরাস (RSV)। এই ভাইরাসের দাপটেই বাড়ছে সংক্রমণ, বলছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। গবেষণা বলছে, আরএসভি ভাইরাস কোনও নতুন ধরনের ভাইরাস নয়। প্রতিবছরই ভারতে এই ভাইরাসের (RSV) দেখা মেলে। মূলত শীতকালে এই ভাইরাসে কমবেশি মাঝবয়সী থেকে বৃদ্ধ ও শিশুরাও আক্রান্ত হয়ে থাকেন। সাধারণ উপসর্গ হল জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট।
স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দাবি, কোভিড পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়েই জীবনযাত্রায় নানা বদল এসেছে। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ করার সহজাত ক্ষমতা কমেছে। কোভিডের প্রাদুর্ভাবেই একাধিক মানুষ তাঁদের অনাক্রম্যতা হ্রাস করেছেন। ফলে খুব সহজে বাসা বাঁধছে এই ভাইরাস। এই সংক্রামক ভাইরাসের একাধিক প্রকারভেদ রয়েছে। বঙ্গে এই মুহূর্তে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই আরএস ভাইরাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলেই দাবি স্বাস্থ্য আধিকারিকদের। এর জেরেই জ্বর-যন্ত্রণা ও মৃত্যু।
শনিবার পর্যন্ত রাজ্য জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে মোট ১১ জনের। শনিবার উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে এক দশ বছর বয়সি নাবালিকা ও মালদায় ৫ মাস বয়স্ক শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে। উভয়ক্ষেত্রেই জ্বর, প্রবল শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। রাজ্য স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, জ্বরের কারণ খুঁজতে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভাইরাস প্যানেলে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। পাশাপাশি, উপসর্গের নিরিখে কী ধরনের চিকিৎসা করতে হবে সেই সংক্রান্ত প্রোটোকল বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করছে। দ্রুত তা জেলাস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ভাইরাল প্যানেলে পরীক্ষা খরচসাপেক্ষ। তাই কোভিড, ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, স্ক্রাব টাইফাস ধরা না পড়লে ভাইরাস প্যানেল করতে বলা হয়েছে। পিএম কেয়ার্সে পাওয়া ভেন্টিলেটরকে পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর, হাই ফ্লো ন্যাজাল অক্সিজেন মাস্কে রূপান্তরিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাড়তি HFNO দেওয়া হচ্ছে।
শিলিগুড়ি: আরএস(RS) ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের এবার পৃথক ওয়ার্ডে রাখার ব্যবস্থা করল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। বেডের সমস্যা এড়াতে এবার হাসপাতালে (Hospital) আরও ১৬টি বেড বাড়ানো হয়েছে।
মেডিকেল সুপার সঞ্জয় মল্লিক জানান, ২৪ ঘণ্টা আগেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। কিন্তু এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। আজ নতুন করে ৫ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মোট ২২ শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। অধিকাংশ বেডই এখন খালি। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে জ্বরের প্রকোপ কমছে। এই মুহুর্তে করোনায় আক্রান্ত কোনও শিশু নেই। একজনের শরীরে আগে সংক্রমণ পাওয়া গেলেও এখনও পর্যন্ত এই ধরনের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। যে সকল নমুনা সংগ্রহ করতে দেওয়া হয়েছে কোনও পজ়েটিভ রিপোর্টের খবর আপাতত মেলেনি।
বিস্তারিত পড়ুন: Unknown Fever: সংক্রমিত শিশুদের পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড উত্তরবঙ্গ মেডিকেলে, বাড়ল শয্যা সংখ্যা
মালদা: অজানা জ্বরে আশঙ্কাজনক অবস্থা আরও ৮ শিশুর। শনিবার সকালেই অজানা জ্বরের প্রকোপে মৃ্ত্যু হয়েছে ৫ মাসের শিশুকন্যা নাজিমা খাতুনের। সেই মেডিক্যাল কলেজেই গুরুতর অবস্থায় আক্রান্ত আরও ৮ শিশু বলে জানিয়ে দিলেন হাসপাতালের এমএসভিপি পুরঞ্জয় সাহা।
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই হাসপাতালে চিকিত্সকদের বিশেষ টিম তৈরি করা হয়েছে। সেই টিম পরীক্ষা করে দেখছে। শুক্রবার থেকে শনিবার সকাল দশটার মধ্যে ৬৪ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। পাশাপাশি ৬১ জন শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুরঞ্জয় সাহা বলেন, ” রেসপিরেটরি ভাইরাসের নানা প্রকার হয়। এই মরসুমে বাচ্চারা এইধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অধিকাংশই সম্পূর্ণ ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিছু জনের ক্ষেত্রে মাল্টি সিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিন্ড্রোম দেখা গিয়েছে। তবে সবটাই নিরাময়যোগ্য। আশা করছি সকলেই কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে।”
সূত্রের খবর, মেডিক্য়াল কলেজে শনিবার পর্যন্ত ১৬৪ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। কিন্তু বেডের সংখ্যা ১২০। হাসপাতালে শয্যা-সংখ্যা বাড়ানো হবে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্য়েই চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। পুরঞ্জয় সাহা এদিন জানিয়েছেন, হাসপাতালের বেড বাড়ানোর জন্য প্রশাসনের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। নির্দেশ এলেই কাজ শুরু হবে। শনিবারের পর তিনদিনে মেডিক্যাল কলেজে অজানা জ্বরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৬। রাজ্যে এই মুহূর্তে অজানা জ্বরে মোট মৃত ১১।
নদিয়া: অজানা জ্বরে (Unknown Fever) পর্যুদস্ত গোটা উত্তরবঙ্গ। জ্বরের (Fever) মানচিত্রে নতুন সংযোজন নদিয়া। জেলা জুড়ে জ্বরে আক্রান্ত প্রায় শতাধিক। কিন্তু, জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এই জ্বর মরসুমি। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। প্রশাসনের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে এই জ্বরে কেবল শিশুরা নয়, আক্রান্ত মধ্যবয়সীরাও। তাহলে কী করে এতটা নিশ্চিন্ত হচ্ছে জেলা প্রশাসন, প্রশ্ন তুলছেন চিকিত্সকেরাই।
বিস্তারিত পড়ুন: Viral Fever: আক্রান্ত শতাধিক, চিন্তায় চিকিত্সকেরা, ‘মরসুমি জ্বর’, দাবি স্বাস্থ্য দফতরের!
জলপাইগুড়ি: করোনার সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলার কথা চিন্তা করে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে তৈরি করা হচ্ছে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা পিকু (PICU)। সিংহভাগ কাজই সারা বলে সূত্রের খবরয এদিকে অজানা জ্বরের (Unknown Fever) প্রকোপে নাজেহাল হাসপাতালে আচমকাই খোয়া গেল সেই বিশেষ ওয়ার্ডের চাবি। শুক্রবার কলকাতা থেকে যাওয়া স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেই ওয়ার্ডে প্রবেশ করানো হল তালা ভেঙে! এমন কাণ্ড জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বজ্ঞানকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন: Jalpaiguri District Hospital: গায়েব পিকুর চাবি, অগত্যা তালা ভেঙে ঢুকলেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা
মালদা: ফের মৃত্যু। অজানা জ্বর (Unknown Fever) কেড়ে নিল আরও এক নবজাতকের প্রাণ। মাত্র পাঁচ মাস বয়সেই মৃত্যু হল কালিয়াচকের নাজিমা খাতুন নামে এক শিশুকন্যার। শুক্রবার তীব্র শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের উপসর্গ নিয়ে মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হয় নাজিমা। শনিবার সকালেই চলে গেল একরত্তির প্রাণ। কেন এই মৃ্ত্যু, কারণ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউই। মুখে কুলুপ এঁটেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যাল কলেজের তরফে জানানো হয়েছে প্রথম থেকেই গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ওই শিশুকে হাসপাতালে আনা হয়। তারপরেই মৃত্যু হয়েছে শিশুটির।
বিস্তারিত পড়ুন: Unknown Fever: হাসপাতালের বেডে গাদাগাদি করে চিকিত্সা, ৫ মাসেই অজানা জ্বরের বলি শিশুকন্যা!
উত্তর দিনাজপুর: ক্রমেই বিপদ বাড়াচ্ছে অজানা জ্বর। শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের উপসর্গ নিয়ে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেই শনিবার সকালে মৃত্যু হয় এক শিশু কন্যার। হেমতাবাদের ইসলামপুরের বাসিন্দা রিনা সেন নামে ওই নাবালিকার মৃত্যু হল তা স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না চিকিত্সকেরা। হাসপাতালর কর্তৃপক্ষের অবশ্য যুক্তি, ওই শিশুটি কোমর্বিড ছিল। সেখান থেকেই মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মাত্র ১০ বছর বয়সী শিশু কোমর্বিড? প্রশ্ন তুলছে সংশ্লিষ্ট মহল।
বিস্তারিত পড়ুন: Unknown Fever: কখনও হার্ট অ্যাটাক, কখনও হাই সুগার, অজানা জ্বরে নাবালিকার মৃত্যুতে বিভ্রান্ত পরিবার!