উত্তর দিনাজপুর: তরুণীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ উঠল। এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ওই তরুণীকে দোষী ঠাওড়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল যুবকের পরিবারের বিরুদ্ধে। মারধরের পর তাঁকে পুলিশের হাতেও তুলে দেওয়া হয়। রায়গঞ্জ থানা এলাকার ঘটনা। নিহত যুবকের পরিবারের দাবি, ওই তরুণী নার্সিং ট্রেনিং নেন। প্রতি নিয়ত ছেলেটিকে টাকা পয়সার জন্য চাপ দিতেন। টাকা না পেলে মানসিক নির্যাতন করতেন। গত শুক্রবার ছেলেটির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সামনেই বাজে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। এরপরই রাতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ার চেষ্টা করেন যুবক। বাড়ির লোকেরা দেখে ফেলায় সেই সময় বিপদ টলানো গিয়েছিল। তবে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সোমবার সকালে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। দু’পক্ষই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে।
রায়গঞ্জ শহরের কাঞ্চনপল্লির বাসিন্দা প্রলয় সাহা একটি টেলিকম সংস্থায় কাজ করেন। ইন্দিরা কলোনির রিমা সাহার সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক বলে দাবি প্রলয়ের পরিবারের। রিমা একটি নার্সিংহোম থেকে নার্সিং ট্রেনিং করছেন। সেই প্রশিক্ষণের জন্য প্রচুর টাকা প্রয়োজন। প্রলয়ের বাবা খগেন সাহা বলেন, “ওই মেয়েটা আমার ছেলের উপর সবসময় টাকা পয়সার জন্য চাপ দিত। শুক্রবার ৬টা নাগাদ আমাদের বাড়িতে আসে। আমিও ঘরেই ছিলাম। সেদিন ঘর ভর্তি লোকের সামনেই মেয়েটা আমার ছেলেকে ধমকাতে থাকে। বলে টাকা না দিতে পারলে যেন মরে যায়। আমার সামনে সবটা হয়েছে।”
এরপর প্রলয় বাড়ির লোকজনকে বিশেষ কিছু বুঝতে দেননি। বাবা ছেলের কাছে জানতে চাইলে, ‘কিছু না’ বলেই কাটিয়ে দেন বলে দাবি খগেন সাহার। এরপর রাতে প্রলয় তাঁর শোওয়ার ঘরে গলায় গামছা জড়িয়ে ঝুলে পড়ার চেষ্টা করেন। যদিও বাড়ির লোকজন সঙ্গে সঙ্গে দেখে ফেলায় উদ্ধার করে রায়গঞ্জ মেডিক্যালে নিয়ে যান। আইসিইউয়ে রাখতে হয়। সোমবার সেখানেই প্রলয়ের মৃত্যু হয়।
প্রলয়ের এক ভাইপো অভিজিৎ সাহার কথায়, “মেয়েটাকে খুবই ভালবাসত কাকা। আজ সকাল ৮টা নাগাদ মারা যায় ও। এরপরই মেয়েটা এসে নতুন নাটক শুরু করে আমাদের এলাকায়। আমাদের বাড়ির কাছে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মরতে চাইছিল। কপালে আবার সিঁদুরও পরে।” মৃতের বোন সুস্মিতা সাহার কথায়, “ওই মেয়েটার যেন শাস্তি হয়। মেয়েটার জন্য এসব হল। সবসময় চাপ দিত আরও টাকা রোজগার করতে হবে দাদাকে। আমাদের বাড়িতেও এসেছে। একদিনই বাড়িতে দাদা বলেছিল আমাকে শান্তি দেবে না।”
এলাকার লোকজন জানান, প্রলয়ের মৃত্যুর পরই রিমা সুভাষগঞ্জে কুলিক নদীর ব্রিজের উপর থেকে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছিলেন। ধরে ফেলেন স্থানীয়রা। প্রথমে মারধর করা হয় রিমাকে। এরপরই পুলিশ ডেকে তুলে দেওয়া হয় তাদের হাতে। অভিযুক্তের মা সোমা সাহা বলেন, “আমার মেয়েটাকে ধরে নিয়ে গিয়েছে। যে ছেলেটা মারা গিয়েছে, তার বাড়ির লোকজন আমার মেয়েটাকে মারধর করেছে। কী জন্য মারল জানি না। আমি কিছুই জানতাম না কী হয়েছে। চুলের মুঠি ধরে মেরেছে। হাতে মুখে আঘাতের চিহ্ন দেখলাম।”