উত্তর দিনাজপুর: উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায় এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ভিন রাজ্য কিংবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে নানা আলোচনা। এরইমধ্যে উত্তরবঙ্গের রাস্তায় নতুন প্ল্যাকার্ডের দেখা মিলল, ‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন সমিতি’। সৌজন্যে বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি। সোমবার রায়গঞ্জ (Raigung) রেল স্টেশন থেকে বিদ্রোহী মোড় পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন সমিতির ব্যানার নিয়ে মিছিল করেন বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ী। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এই ব্যানার নিয়ে রাস্তায় নেমে বিস্ফোরক অভিযোগও শোনা গিয়েছে এই বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতির গলায়। তাঁর অভিযোগ, এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বাইরের। ফলে উত্তরবঙ্গের আবেগ তাঁরা বোঝেন না।
সোমবার বিকেলে রায়গঞ্জের রেল স্টেশনের সামনে থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন সমিতি সমর্থকরা একটি মিছিল শুরু করেন। এই মিছিল শেষ হয় রায়গঞ্জের বিদ্রোহী মোড়ে। মিছিল থেকে রায়গঞ্জের রেল যোগাযোগের উন্নয়ন-সহ রায়গঞ্জ শহরে রেলের ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবি, রায়গঞ্জে এইমসের (AIIMS) দাবি ওঠে। মিছিলে শুধু উত্তর দিনাজপুর জেলা বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ লাহিড়ীই নন, ছিলেন ইটাহারের বিজেপি নেতা নিমাই সিংহ-সহ একাধিক নেতা।
মিছিলের শুরুতে বিশ্বজিৎ লাহিড়ী নিজেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন সমিতির সদস্য পরিচয় দিয়ে বলেন দীর্ঘদিন ধরে উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত হচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছে রায়গঞ্জ-সহ উত্তর দিনাজপুর জেলাও। তাঁর কথায়, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন সমিতি ব্যানারে ১৫ জনের একটা দল হয়েছে। সকলেই উত্তরবঙ্গের। সেই দলের একজন সদস্য আমি। আজ আমরা রায়গঞ্জ রেলস্টেশন থেকে বিদ্রোহী মোড় পর্যন্ত একটা মিছিল করব। কারণ ভোটে আসে ভোট যায়। নেতারা খালি প্রতিশ্রুতি দেন। এখানে বহিরাগত প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। এখানকার ভূমিপুত্ররা নির্বাচিত হন না। ফলে উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত, শোষিত, অবহেলিত। রায়গঞ্জের বিরাট সমস্যা যানজট। ওভারব্রিজ তৈরি হয়নি। দিল্লিগামী ট্রেন বন্ধ। গত বিধানসভা ভোটের আগেও অনেক শুনেছি। এর আগের ভোটেও বলা হয়েছিল। লোকসভা নির্বাচনের আগে আমরা উত্তরবঙ্গে এইমস চাই।”
বিশ্বজিতের বক্তব্য ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি তিনি কোনওভাবে দলের একাংশের দিকে আঙুল তুলছেন? কারণ রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী বিজেপির। অন্যদিকে রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণীও বিজেপির টিকিটেই জয়ী। যদিও একইসঙ্গে বিশ্বজিৎ বলেন, উন্নয়নের স্বার্থে বিহার, মধ্য প্রদেশ বা উত্তর প্রদেশকে ছোট করা হলে পশ্চিমবঙ্গ ছোট করা হবে না কেন?
এই মিছিল শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিশ্বজিৎ লাহিড়ী দাবি করেন, “আমি আগেও রাজনৈতিকভাবে বিজেপির জেলা সভাপতি ও সমর্থক ছিলাম। আজও বিজেপিতেই আছি। কিন্তু আমি যে রাজনৈতিক দলই করি না কেনো, আগে আমি বঞ্চিত উত্তরবঙ্গের মানুষ।”
বিশ্বজিৎ লাহিড়ীর এই বক্তব্য নিয়ে বিজেপির বর্তমান উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকারের মন্তব্য, “বিশ্বজিৎ লাহিড়ী তাঁর ব্যক্তিগত দাবিদাওয়া নিয়ে কোনও আন্দোলন করতেই পারেন। তিনি বিজেপির পতাকা নিয়ে না করলে আমাদের কিছু বলার নেই।”
অন্যদিকে রায়গঞ্জের তৃণমূল নেতা তথা রায়গঞ্জ পুরসভার উপ পুরপ্রশাসক অরিন্দম সরকারের মত, এসব বিজেপিরই কৌশল। ওরা উন্নয়ন না করে মানুষকে ভুল বোঝায়। তিনি বলেন, “এই আন্দোলনের বাইরেও বিজেপি আছে আর ভিতরেও বিজেপি আছে।”