উত্তর দিনাজপুর: কার্নিভালে হঠাৎই প্রবেশ বলদের। সেই বলদের ধাক্কায় মৃত্যু হয় ষাটোর্ধ্ব সাধন কর্মকারের। সকলে যখন এই দুর্ঘটনার জন্য বলদকেই কাঠগড়ায় তুলছে, তখন সাধনবাবুর মেয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এখনও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ তুলে শনিবার বেশ কিছুক্ষণের জন্য বন্দর এলাকায় ক্লাবের সামনে মৃতদেহ রেখে বিক্ষোভ দেখান এলাকার লোকজনও। ইতিমধ্যে রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যানী নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের কথাও জানিয়েছেন তিনি। তবে কিছুতেই একটা প্রশ্ন পিছু ছাড়ছে না, এক আলোর ঝলকানি, এত মানুষের ভিড়। তার মধ্যে এই বলদ আনা হল কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সাধনবাবুর মেয়ে জুলি কর্মকার প্রশাসন ও আয়োজক ক্লাবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে এই গাফিলতি নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন।
কোথা থেকে কার্নিভালে এই বলদ এল?
শুক্রবার জেলায় জেলায় ছিল বিসর্জনের কার্নিভাল। রায়গঞ্জের মোহনবাটি এলাকাতেও প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। জানা গিয়েছে, একটি ক্লাবের প্রতিমা আনা হয়েছিল বলদে টানা গাড়িতে। হঠাৎই দু’টি বলদের মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে ছুট লাগায়। পাই পাই করে ছুটতে থাকে সে। যে ছেলেটি বলদের দেখভালের দায়িত্বে ছিল, সেও কিছু পথ দৌড়ে যায়। তবে খুব তাড়াতাড়িই বুঝে যান লাগাম পরানো সহজ নয়। শত শত মানুষের ভিড়ের মধ্যে দিয়ে দৌড়তে থাকে বলদটি। এদিকে মানুষ ভয়ে পাল্টা দৌড় লাগায়। কেউ পড়ে যান, কারও আবার ভয়ে শরীর খারাপ করে ফেলে। কেউ আবার ওই বলদের ধাক্কার শিকার হন। যেমন হয়েছেন সাধনবাবু। প্রাণটাই খোয়াতে হয়েছে তাঁকে। মর্মান্তিক এই ঘটনা।
যেখানে প্রশ্ন
অভিযোগ, একজন মাত্র পুলিশকর্মী ও দর্শকের কয়েকজন মিলে ছুটন্ত বলদটিকে বাগে আনলে ফের সামনের দিকে শোভাযাত্রা এগিয়ে যায়। অভিযোগ, এই ঘটনা ঘটার পরও পরপর তিনটে প্রতিমা নিয়ে বলদের গাড়িগুলিকে জনতার ভিড়ের দিকে যেতে দেওয়া হয়। কেন সেই র্যালি থেকে বলদগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হল না? প্রশাসনের কর্তাদের সামনেই এই ঘটনায় কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না? প্রশ্ন এলাকার লোকজনের।
পশুপ্রেমী সংগঠনগুলিও ক্ষুব্ধ
এই ঘটনার বলদের উপর সব দোষ চাপিয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ পশুপ্রেমী সংগঠনগুলি। তাদের বক্তব্য, বলদ অবলা জীব। তাদের কীভাবে কোনও দোষ থাকতে পারে? বরং তারা প্রশ্ন তুলছে যে ক্লাব এই বলদগুলি এনেছিল তাদের ভূমিকা নিয়ে। আঙুল তুলছে প্রশাসনের দিকেও। এখানে মানুষের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছে তারা। ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে উত্তর দিনাজপুর ‘পিপল ফর অ্যানিম্যাল’।
শুরু রাজনৈতিক তরজাও
বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যানী মৃতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। অপরদিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের মন্তব্য, মাল বাজারের ঘটনার পর রায়গঞ্জে কার্নিভালের জন্য পুলিশ ও প্রশাসনকে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার বলছেন, প্রশাসন যে কতটা উদাসীন তা মালের পর রায়গঞ্জের ঘটনায় স্পষ্ট।