ইটাহার : রাস্তা দিয়ে দ্রুতগতিতে চলে যাচ্ছে একের পর এক গাড়ি। তেমনই পার হয়ে যাচ্ছিল একটি লরি। বাঁশ বোঝাই। দূর থেকে দেখলে যে কেউ এটাই মনে করবেন। কিন্তু, সেই বাঁশের আড়ালে যে অন্য কিছু রয়েছে, তা দেখে বোঝার উপায় নেই। বন দফতরের কর্মীরা লরিটি থামিয়ে চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। চালক বলেন, লরিতে বাঁশ নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু, সন্দেহ হওয়ায় বাঁশের ফাঁক দিয়ে একটু ভাল করে তাকাতেই কেমন যেন ঠেকে অভিজ্ঞ বন দফতরের কর্মীদের। তাই, লরি থেকে বাঁশ সরিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেন। আর লরি থেকে বাঁশ সরাতেই অবাক হয়ে যান তাঁরা। বাঁশের নীচে থরে থরে সাজানো মূল্যবান কাঠ। ঘটনাটি উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের। মূল্যবান বার্মাটিক কাঠ-সহ লরিটি বাজেয়াপ্ত করেছে রায়গঞ্জ বন বিভাগ। গ্রেফতার করা হয়েছে এক যুবককে।
গোপন সূত্রে খবরের ভিত্তিতে শনিবার রাতে রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড়ে ওৎ পেতে বসেছিলেন বন দফতরের কর্মীরা। হরিয়ানার নম্বর প্লেটযুক্ত বাঁশ ‘বোঝাই’ লরিটিকে দেখে সন্দেহ হয়। এরপর সেটির পিছু নিয়ে ইটাহারে দাঁড় করিয়ে তল্লাশি চালান বন দফতরের কর্মীরা। তাতেই দেখা যায় উপরে ও পিছনে বাঁশ দিয়ে আড়াল করে তার মাঝে ৮১টি বার্মাটিক সেগুন কাঠের লগ পাচার করা হচ্ছিল। কাঠ-সহ লরিটিকে বাজেয়াপ্ত করা হয়। পাশাপাশি লরির চালককে আটক করে রায়গঞ্জ বন বিভাগের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
রবিবার ধৃত হরিয়ানার বাসিন্দা ভকিল নামে বছর পঁচিশের ওই যুবককে রায়গঞ্জ জেলা আদালতে তুলেছে বন দফতর। তাঁর বিরুদ্ধে সম্পত্তি নষ্ট ও বেআইনিভাবে কাঠ পাচার-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বন দফতর। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বন দফতরের আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন যে, দামি ও উন্নতমানের বার্মাটিক সেগুন কাঠগুলি অসম ও উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে উত্তরবঙ্গ হয়ে অন্ধ্রপ্রদেশে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছিল। উচ্চ দামের ও অত্যন্ত মূল্যবান এই কাঠগুলি আন্তর্জাতিক বাজারেও যথেষ্ট চাহিদা আছে। তাই সেগুলি ঠিক কোথায় পাচার করা হচ্ছিল সেটা খতিয়ে দেখছে বন দফতর।
রায়গঞ্জ ডিভিশনের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (DFO) কমল সরকার বলেন, লরিতে যে বার্মাটিক সেগুন কাঠ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তার কোনও কাগজ দেখাতে পারেননি চালক। প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা মুল্যের বার্মাটিক সেগুন কাঠের লগ সহ প্রায় ১ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। ধৃতকে আজ রায়গঞ্জ জেলা আদালতে তোলা হলে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।