9/11 attacks: ছয় মাস পর বাবার মৃত্যুর খবর দিয়েছিল পুলিশ, দাঁত না পেলে কোনওদিন জানাই যেত না

TV9 Bangla Digital | Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Sep 11, 2022 | 5:28 PM

২০ বছরের বেশি পার হয়ে গিয়েছে। তবু, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের প্রতিটি খুঁটিনাটি ঘটনা মনে আছে এরিকা উইসনিউস্কির। ছয় মাস পর বাবার মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল পুলিশ।

9/11 attacks: ছয় মাস পর বাবার মৃত্যুর খবর দিয়েছিল পুলিশ, দাঁত না পেলে কোনওদিন জানাই যেত না
গ্রাউন্ড জ়িরোতে প্রিয়জনদের স্মরণ করছেন মার্কিন জনতা

Follow Us

ওয়াশিংটন: ২০ বছরের বেশি পার হয়ে গিয়েছে। তবু, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের প্রতিটি খুঁটিনাটি ঘটনা মনে আছে এরিকা উইসনিউস্কি। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর, হাইস্কুলে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। জ্যামিতি ক্লাস চলাকালীন ঘোষণা করা হয়েছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারের উপর ভেঙে পড়েছে একটি বিমান। তাঁর বাবা সাউথ টাওয়ারের ১০৪তম তলায় কাজ করতেন। তবে, তাঁকে নিয়ে তখনও ভাবার সময় পাননি এরিকা। কারণ সেই সময় তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন সহপাঠীদের সান্ত্বনা দিতে। অনেক পরে তিনি বুঝেছিলেন, তাঁর বাবা আর বাড়ি ফিরবেন না। আর এই বিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেতে পেতে কেটে গিয়েছিল ছয় মাস!

দাদু-দিদিমা তাঁকে এবং তাঁর বোন জেসিকা (বর্তমানে বয়স ২৬, তখন ছিল ৬ বছর) এবং ভাই ম্যাথু (বর্তমানে বয়স ২৪, তখন ছিল ৪ বছর) বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। নর্থ টাওয়ার ধ্বংসের পর, মোবাইল পরিষেবা বন্ধ থাকলেও, তাঁদের বাবা, ঠাকুমাকে ফোন করতে পেরেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন যে তিনি ঠিক আছেন। তাঁদেরকে, তাঁরা যেখানে আছেন, সেখানে থাকতে বলা হয়েছে। এটাই ছিল তাঁর বাবার শেষ কথা। সকাল ৯টা বেজে ৫৯ মিনিটে ধ্বংস হযে গিয়েছিল সাউথ টাওয়ারও। এরপর, এরিকা এবং তাঁর মা দুজনে মিলে তাঁর বাবার খোঁজ শুরু করেছিলেন। একের পর এক হাসপাতালে ফোন করেছিলেন। বাবার বন্ধুদের ফোন করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাঁদের কাছে কোনও খবর আছে কি না। কিন্তু, কারোর কাছ থেকে কোনও খবর পাননি তাঁরা।

পরের দিন মাকে নিয়ে এরিকা গিয়েছিলেন ‘গ্রাউন্ড জিরো’-তে। এরিকা জানিয়েছেন, পুরো এলাকায় প্রায় শ্মশানের শান্তি বিরাজ করছিল। এরিকাদের পা ডুবে গিয়েছিল ছাইতে। তাঁরা অনুভব করেছিলেন টুইন টাওয়ারের ধ্বংসাবশেষের উপরে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরা, যাকে বলা যেতে পারে একটা বিশাল কবরস্থান। এরিকা জানিয়েছেন, বহু মানুষ প্রিয়জনদের খোঁজে শত শত পোস্টার টাঙিয়েছিলেন। এরিকা এবং তাঁর মা, তাঁদের প্রিয়জনের খোঁজে রেড ক্রস একটি তাঁবু থেকে অন্য তাঁবু ছুটে বেরিয়েছিলেন। তাঁদের আশা ছিল, এরিকার বাবা হয়তো তখনও বেঁচে। এর এক সপ্তাহ পর অবশ্য এরিকাদের মা তাঁদের একসঙ্গে বসিয়ে বুঝিয়েছিলেন যে বাবা আর বাড়ি ফিরবেন না।

প্রিয়জনদের ছবি লাগিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ৯/১১ হামলায় নিহতদের প্রিয়জনরা

ওই বছরের ১ ডিসেম্বর বাবার জন্য একটি স্মরণসভা করেছিলেন এরিকারা। সেই প্রথম কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন এরিকা। প্রথমবার বাবার মৃত্যু ধাক্কা মেরেছিল তাঁকে। তবে তখনও তাঁরা এরিকার বাবার মত্যু সম্পর্কে সরকারি নিশ্চয়তা পাননি। প্রায় ছয় মাস পর, এরিকার বাবার মৃত্যুর নিশ্চিত খবর নিয়ে এক পুলিশ অফিসার এসেছিলেন নিউ জার্সির হাওয়েলে তাঁদের বাড়িতে। তিনি এরিকাদের জানিয়েছিলেন, দাঁতের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এরিকার বাবার দেহাবশেষ সনাক্ত করা হয়েছে।

এই ঘটনা বদলে দিয়েছিল তাঁদের পুরো পরিবারকে। তাঁর মা স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপালের চাকরি থেকে সময়ের আগে অবসর নিয়ে নিয়েছিলেন। এক কংগ্রেসম্যানের সহকারি হিসেবে নিজেকে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে ফেলেছিলেন। তাঁর বোন জেসিকা ও ম্যাথুর শিশুমনে গভীর প্রভাব পড়েছিল বাবার মৃত্যু। মানসিক কাউন্সেলরের সমর্থন নিতে হয়েছিল তাঁদের। এমনকি, বয়স ২০ বছর হওয়ার পর এরিকাকেও থেরাপি নিতে হয়েছিল। এখন তিনি প্রাক্তন সেনা সদস্যদের সাহায্য করে থাকেন। এরিকা জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই ৯/১১-র কারণে যুদ্ধ করতে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন। তাঁরা প্রত্যেকেই পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা পিটিএসডি-তে ভোগেন। যে রোগে ভুগতেন এরিকা নিজেও। প্রতি বছর ১১ সেপ্টেম্বরের দিন, নিউইয়র্কের স্মৃতিসৌধে তাঁর বাবা-সহ,নিহতদের নামের একটি তালিকা জোরে জোরে পাঠ করেন। স্মরণ করেন তাঁদের।

Next Article