প্যারিস: অবশেষে মুক্তি পাচ্ছেন মানব পাচারের সন্দেহে ফ্রান্সে আটকে পড়া ৩০৩ জন ভারতীয় যাত্রী। গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আমেরিকার নিকারাগুয়া যাওয়ার পথে ফ্রান্সের ভার্টি বিমানবন্দরে আটকানো হয়েছিল ভারতীয় যাত্রীবাহী একটি চার্টার্ড বিমান। বিমানটি ছিল রোমানিয়ান উড়ান সংস্থা ‘লেজেন্ড এয়ালাইন্সের’। সদ্য মুক্তি পেয়েছে শাহরুখ খান অভিনিত চলচ্চিত্র ‘ডানকি’। এই ‘ডানকি ব়্যুট’ বা চোরা পথে ওই ভারতীয় নাগরিকদের আমেরিকায় পাচারের জন্যই তাঁদের নিকারাগুয়ার নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সন্দেহে, বহিমানটিকে আটক করেছিল ফরাসী কর্তৃপক্ষ। ওই যাত্রীদের ফ্রান্সেই আটকে রাখা হবে, নাকি মুক্তি দেওয়া হবে, রবিবার ছিল সেই মামলার বিচার। বিদেশ মন্ত্রকের শীর্ষস্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ফরাসি বিচারক তাঁদের ফ্রান্স থেকে অন্যত্র যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছেন।
সূত্র মতে, ফরাসি বিচারক আটকে রাখা ভারতীয়দের যত দ্রুত সম্ভব ফ্রান্স ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ২৬ ডিসেম্বরই তাঁরা ফ্রান্স থেকে অন্যত্র উড়ে যাবেন বলে আশাকরা হচ্ছে। তবে, সেখান থেকে তারা ভারতে ফিরবেন, নাকি তাঁদের সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে নিয়ে যাওয়া হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের ভারতে ফেরত পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে। তবে, লেজেন্ড এয়ারলাইন্সের ওই চার্টার্ড বিমানটির শুধুমাত্র দুবাই পর্যন্ত উড়ে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। ভারতে আসার অনুমতি নেই। এই অবস্থায় ৩০৩ জন ভারতীয়দের ফ্রান্সের বাইরে পাঠানোর জন্য ফরাসী কর্তৃপক্ষ দুটি পরিকল্পনা বিবেচনা করছে। প্রথম পরিকল্পনা, ভারতীয়রা ওই বিমানেই যাত্রা করবেন। দ্বিতীয় বিকল্প, এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে তাদের পাঠানো হবে। সেই ক্ষেত্রে অবশ্য টিকিটের দাম কে দেবে, সেই প্রশ্ন রয়েছে।
দুবাই থেকে ওই ৩০৩ ভারতীয় যাত্রী নিয়ে বিমানটি রওনা দিয়েছিল। নিকারাগুয়া যাওয়ার পথে, জ্বালানি ভরার জন্য সেটি ফ্রান্সের ভার্টি বিমানবন্দরে থেমেছিল। আর সেই সময়ই, ফরাসি কর্তৃপক্ষ মানব পাচারের সন্দেহে বিমানটিকে আটক করেছিল। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, অধিকাংশ যাত্রীই পঞ্জাব ও গুজরাটের দরিদ্র গ্রামবাসী। তাঁরা নিকারাগুয়া দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে চেয়েছিল। ফরাসি কর্তৃপক্ষ ভারতকে যে কনস্যুলার অ্যাক্সেস দিয়েছিল, তাতেই এটা জানা গিয়েছে। এর জন্য এক সংস্থাকে তারা লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। ওই ভারতীয় নাগরিকদের বলা হয়েছিল, পুলিশ জিজ্ঞেস করলে তাঁরা যেন বলেন, তারা ঘুরতে যাচ্ছেন।
বস্তুত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য নিকারাগুয়া বর্তমানে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পথ। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বিমানটিকে আটক করার আগেই, ফরাসি কর্তৃপক্ষের কাছে মানব পাচার সংক্রান্ত খবর ছিল। এদিন আদালতে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেনামি এক সূত্র তাদের এই সম্পর্কে খবর দিয়েছিল। ওই সূত্র জানিয়েছিল, ওই বিমানে থাকা যাত্রীরা সম্ভবত মানব পাচারের শিকার। ২০১৩ সালের পর থেকে অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়া ভারতীয়র সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে গত দুই বছরে এই সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। শুধুমাত্র মেক্সিকো সীমান্ত দিয়েই অবৈধভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করতে গিয়ে ২০২২ সালে ধরা পড়েছিলেন ৩০০০ ভারতীয়। এই বছর নভেম্বরের মধ্যেই সেই সংখ্যা ১১,০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।