জ়েরুসালেম: সমাধিটা পুরোটা খোলাও হয়নি, তার আগেই দেখা গেল এক ভয়ঙ্কর সতর্কবার্তা-সহ শিলালিপি। রক্ত-লাল রঙে লেখা ওই সতর্কবাণী ছিল সমাধিটি যারা খুলবে, তাদের উদ্দেশ্যেই। না, কোনও ভৌতিক চলচ্চিত্রের কাহিনি নয়। ঘোর বাস্তবে এই ঘটনা ঘটেছে ইসরাইলের প্রাচীন শহর বেইত শেয়ারিম। এই শহরের ঠিক কেন্দ্রে রয়েছে এক ‘নেক্রোপোলিস’ অর্থাৎ, ‘মৃতদের শহর’। ‘বেইত শেয়ারিম ন্যাশনাল পার্ক’ নামে পরিচিত এই প্রাচীন সমাধিস্থলে প্রায় এক বছর ধরে খনন কাজ চালাচ্ছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। অতি সম্প্রতি ওই ভৌতিক সতর্কবার্তা-সহ প্রাচীন সমাধিটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।
শিলালিপিটি প্রাচীন হরফে লেখা। রক্ত-লাল রঙে ওই লেখা দেখেই খটকা লেগেছিল প্রত্নতাত্ত্বিকদের। পরে সেই লিপি অনুবাদ করা হয়। কী লেখা আছে ওই সতর্কবার্তায়? লিপি গবেষকদের মতে পাথরটিতে লেখা আছে, ‘যে এই সমাধিটি খুলবে, তার উপরই নেমে আসবে ইয়াকভ হা’গারের অভিশাপ। তাই কেউ এটা খুলবে না। ৬০ বছর বয়সী।’ প্রসঙ্গত, উনবিংশ শতকের গোরায়, প্রাচীন মিশরীয় সমাধি থেকে মমি উদ্ধারের সময়, সংশ্লিষ্ট অনেক প্রত্নতাত্ত্বিকের জীবনেই ঘটেছিল কিছু ব্যাখ্যাতীত ঘটনা।
তবে এই ক্ষেত্রে সেরকম কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই বলেই দাবি করেছেন গবেষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, শুধু ইজ়রায়েলেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই প্রাচীন সমাধিতে এই ধরনের সতর্কবার্তা দেখা যায়। মূলত যারা সমাধির থেকে মূল্যবান পণ্য ডাকাতি করার জন্য সমাধি খুলে থাকে, তাদের ভয় দেখানোর জন্য এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। তবে, আরেকটি সম্ভাবনাও আছে। আদি এরলিচ নামে এক ইজ়রায়েলি গবেষক বলেছেন, ‘সম্ভবত এই বার্তা ছিল অন্যদেরকে পরবর্তী সময়ে সমাধিটি খুলতে বাধা দেওয়ার জন্য। এই অঞ্চলে প্রায়শই আগের সমাধিগুলি পুনরায় ব্যবহার করা হয়। এই ক্ষেত্রেও যাতে সেটা না হয়, তার জন্যই এই অভিশাপের ভয় দেখানো হয়েছে’।
মুখে অভিশাপের ভয় নেই বললেও, প্রত্নতাত্ত্বিকরা কিন্তু সমাধিটি খোলেননি। ‘টাইমস অফ ইজ়রায়েলের’ এক প্রতিবেদন অনুযায়ী তাঁরা শুধুমাত্র ওই শিলালিপিটি তুলে নিয়ে গিয়েছেন। মূল সমাধির গুহাটিকে নিরাপদ রাখতে সেটিকে সিল করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জানিয়েছেন এই মুহূর্তে আর কোনও খননের পরিকল্পনা নেই তাঁদের। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, গত ৬৫ বছরের মধ্যে ‘বেইত শেয়ারিম ন্যাশনাল পার্কে’ একটি নতুন সমাধি পাওয়া গেল। প্রসঙ্গত, এই পার্কে পাথর কেটে কেটে তৈরি বেশ কিছু প্রাচীন সমাধি রয়েছে। পার্কে রয়ে গিয়েছে প্রাচীন শহরের সামান্য কিছু অংশও। ২০১৫ সালে এই পার্ককে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
তবে, গবেষকদের মতে অন্য এক কারণে এই সমাধি খুঁজে পাওয়া এক বিরাট সাফল্য। তাঁরা বলছেন, ‘শিলালিপিটি রোমান যুগের শেষ সময়ের বা বাইজেন্টাইন যুগের। অন্তত ১৮০০ বছরের পুরোনো। ওই সময় এই অঞ্চলে দারুণ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল খ্রিস্টধর্ম। তবে, এই সমাধি থেকে আমরা প্রমাণ পাচ্ছি যে সেই সময়ও এমন কিছু লোক ছিল, যারা তখনও ইহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। রোমান যুগে যারা খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিল, তাদের প্রসঙ্গে জানা গিয়েছিল, তাদের সমাধি থেকে।’