কাবুল: একদিকে রাজধানী কাবুলের দোরগোড়ায় চোখ রাঙাচ্ছে তালিবান। অন্যদিকে, আফগান প্রেসিডেন্ট আসরাফ ঘানির পদত্যাগ চাইছে পাকিস্তান। এরই মধ্যে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রেসিডেন্ট। আজ, শনিবার ভার্চুয়ালি ভাষণ দেন ঘানি। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, বিগত ২০ বছরে ফিরে পাওয়া গৌরব হারাতে দেবেন না তিনি। এর আগে গত বুধবার প্রেসিডেন্টকে জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল মাজার-ই-শরিফে। ইতিমধ্যে সেই মাজার-ই-শরিফও চলে গিয়েছে তালিবানের দখলে। দেশের সেনাবাহিনীকে নিজেদের অবস্থানে ফেরানোই যে মূল লক্ষ্য, সে কথাও সাফ জানিয়েছেন ঘানি।
জল্পনা ছিল, এই অস্থিরতার মধ্যে পদত্যাগ করতে পারেন তিনি। তবে তেমন কোনও সম্ভাবনার কথা এ দিন শোনা যায়নি তাঁর মুখে। পুরো পরিস্থিতির দায় তিনি কাঁধে তুলে নিচ্ছেন, এমন কোনও বার্তাও দেননি আসরাফ ঘানি। তিনি শুধু জানিয়েছেন, তালিবানদের সঙ্গে আলোচনা জারি আছে। যুদ্ধ বন্ধ করার জন্যআফগান সরকার উদ্যোগী বলেও জানিয়েছেন তিনি। যখন তালিবান একেবারে রাজধানীর দরজায় এসে কড়া নাড়ছে, সেই পরিস্থিতিতে আসরাফ ঘানি এ দিন বলেন, ‘আমাদের কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সেনাবাহিনীকে নিজেদের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা। আমি কখনও যুদ্ধ হতে দেব না, যাতে আফগানিস্তানের আরও মানুষের মৃত্যু হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে আমরা যা গড়ে তুলেছি, তা ধ্বংস হয়ে যেতে দেব না। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হতে দেব না।’ ঘানি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদী শাসন রুখতে তিনি বর্ষীয়ান নেতা, রাজনীতিবিদ, জনসাধারণের প্রতিনিধি ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করছেন। পাশাপাশি, তালিবানদের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করার জন্য আফগান সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেছেন তিনি।জানা গিয়েছিল, আফগান সরকার কাছে তালিবানের কাছে নতিস্বীকার করার কথাও ভাবছে। সূত্রের খবর, ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিতে পারে আসরাফ ঘানি সরকার। তবে এ দিন তেমন কোনও বার্তা দেননি ঘানি।
এ দিকে, একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানী দখল করার পর বাকি রয়েছে শুধু কাবুলই। শুক্রবার আফগানিস্তানের কান্দাহার, হেরাত সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করে ফেলেছে তালিবান। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল তালিবানরা। শুক্রবার লোগহার প্রদেশের রাজধানী পুল-ই-আলম শহরও দখল করে নেয় তালিবানরা, যা কাবুল থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। খইরদ্দিন লোগারি শহরের বাসিন্দারাও বুঝতে পারছেন না যে তারা তালিবানদের দখলে চলে গিয়েছেন কি না। গতকালই কান্দাহারের বাসিন্দারা জানিয়েছিলেন আফগান সেনাদের শহর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। তালিবানের তরফেও জানানো হয় যে, কান্দাহার সম্পূর্ণভাবে তাদের দখলে চলে গিয়েছে।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকায় আমেরিকা, ব্রিটেনের তরফে নিজেদের প্রতিনিধিদের দেশে ফেরানোর কাজ শুরু হয়েছে। আমেরিকার তরফে তিন হাজার সেনা পাঠানো হচ্ছে কাবুলে মার্কিন দূতাবাসে আটকে থাকা আধিকারিকদের উদ্ধারের জন্য। অন্যদিকে, ব্রিটেনের তরফেও ৬০০ সৈন্য পাঠানো হচ্ছে ব্রিটিশ নাগরিকদের উদ্ধারের জন্য। ভারতও নাগরিকদের ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিমানে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বেশ কয়েকজন ভারতীয় আধিকারিককে। আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে তালিবানি শাসন মানবে না ভারত, শান্তিস্থাপনের বার্তা দিল্লির