কাবুল : তালিবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়ে গিয়েছে আফগানিস্তানে। শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছে কুখ্যাত হাক্কানি গোষ্ঠীর আব্দুল বাকি হাক্কানি। আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, সেখানে মহিলাদের অধিকার আদৌ রক্ষা হবে তো! স্কুলে যেতে পারবে তো আফগানিস্তানের মেয়েরা? তবে এখনই মেয়েদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে না তালিবরা। শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল বাকি হাক্কানি জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের মেয়েরা পড়াশোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারবেন। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয় স্তরেই পড়াশোনা করতে পারবেন তাঁরা। তবে এক্ষেত্রে ইসলামিক পোশাক থাকা আবশ্যিক। এবং মেয়েদের জন্য পৃথক ক্লাসরুম থাকতে হবে।
আফগানিস্তানের তালিবান সরকারে কোনও মহিলা প্রতিনিধিত্ব নেই। আর প্রত্যেকেই তালিবান। আফগানিস্তানের অন্য গোষ্ঠীগুলিরও কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই। অন্তর্বর্তীকালীন তালিবান সরকার এই নিয়ে ভীষণ ভাবে সমালোচিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
কূটনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, আর নতুন করে নিজেদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাইছে না তালিবরা। কারণ, নতুন তালিবান সরকারের আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি প্রয়োজন। সেই স্বীকৃতি ছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বা অর্থনীতি, সবকিছুতেই হোঁচট খেতে হতে পারে তালিবদের। সম্ভবত সেই কারণেই নিজেদের ‘গুড বয়’ ভাবমূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে তালিবরা।
মহিলারা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার অনুমতি পেলেও হিজাব পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে এই হিজাবে শুধু মাথা ঢাকতে হবে, নাকি মুখও ঢাকতে হবে, তা নিয়ে এখনও বিশদে কিছু জানায়নি হাক্কানি।
তালিবান সরকার গঠন নিয়ে শুক্রবার প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারত। যাতে সমাজের সব স্তরের মানুষ সরকার গঠনের গুরুত্ব পায়, সে দিকে নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে এই বিষয়ে একটি বিবৃতিও দেওয়া হয়েছে ভারতের তরফে। বলা হয়েছে, আফগানিস্তান হল ভারতের প্রতিবেশী ও আফগানিস্তানের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে ভারতের। তাই আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত।
রাষ্ট্রপুঞ্জে এই প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়ে ভারতীয় কূটনীতিক তিরুমূর্তি বলেন, ‘ভারত চায় আফগানিস্তানে যাতে সব স্তরের মানুষকে গুরুত্ব দেওয়া হোক। আন্তর্জাতিক স্তরে গ্রহণযোগ্যতা পেতে গেলে আব স্তরের প্রতিনধিদের জায়গা দিতে হবে সরকারে ও রাজনীতিতে।’
বিবৃতিতে ভারতের তরফে আরও বলা হয়েছে যে, ‘যেহেতু আফগানিস্তান ভারতের প্রতিবেশী ও আফগানদের বন্ধু ভারত, তাই আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আমাদের জন্য উদ্বেগের।’ গত দু’বছরে যে সব নির্মাণ গড়ে তোলা হয়েছে সেগুলি যাতে রক্ষা করা যায়, সে দিকে নজর দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ভারতের বার্তা, ‘আফগান মহিলাদের কথা শুনতে হবে, আফগান শিশুদের নিয়ে চিন্তা করতে হবে, সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে হবে।’
এর আগে আফগানিস্তানের মহিলাদের ক্রিকেটার এবং ফুটবলারদের খেলা নিষিদ্ধ করেছে তালিবরা। সেই নিয়েও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে, আফগান ক্রিকেটকে বয়কট করার। এইরকম একটা আন্তর্জাতিক স্তরের চাপের মধ্যে আর আগের পথে হাঁটল না তালিবরা।
আরও পড়ুন : হাতে তালিবানি পতাকা, হিজাবে শরীর ঢেকেই সরকারের সমর্থনে মিছিল আফগান মহিলাদের!