কোপেনহেগেন: ২০২৩ জুড়ে বিশ্বে সবথেকে আলোচিত যে বিষয়গুলি ছিল, তার মধ্যে অন্যতম এআই, অর্থাৎ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক ব্যবহার শুরু হলে, অনেক মানুষই কাজ হারাবেন বলে আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে অনেকের মধ্যে। কোন কোন ক্ষেত্রে চাকুরিজীবীরা কাজ হারাতে পারেন, তা নিয়ে চর্চা চলছে। তবে, বছরের শেষে এসে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, এআই-এর দাপটে অন্তত ব্।বসা গোটাতে হতে পারে জ্যোতিষীদের। মানব সভ্যতার আদিকাল থেকেই যে মৌলিক প্রশ্নগুলি আমাদের চিন্তা জগতে ঘোরাফেরা করে, তার মধ্যে অন্যতম হল, কবে আমাদের মৃত্যু হবে? এ এমন এক ঘটনা, যা প্রতিটি মানুষের জীবনে অনিবার্য। কিন্তু, কেউই জানে না, কবে শেষ হবে জীবন। জ্যোতিষীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেন। অনেক ক্ষেত্রে তা মিলে যায়, অনেক সময় মেলে না। তবে, বিশ্বের কোনও জ্যোতিষী মৃত্যু নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার সাহস দেখান না। এবার সেই দুঃসাহসিক কাজই সফলভাবে করে দেখাল এআই। হ্যাঁ, আপনার কবে মৃত্যু হবে, তাও বলে দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
চ্যাটজিটিপি-র মতো এআই ভিত্তিক অ্যাপের সঙ্গে অনেকেই ইতিমধ্যে পরিচিত হয়েছেন। এআই ভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে ছবি তৈরিও করেছেন অনেকে। মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করা এআই-ও তাদের থেকে খুব একটা আলাদা নয়। ডেনমার্কের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা এই এআই মডেলটি তৈরি করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, আপাতত ডেনমার্কের জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে মডেলটি তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা ২০০৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত ৬০ লক্ষ্য নাগরিকের স্বাস্থ্য ও শ্রম ক্ষেত্রের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। নাগরিকদের শিক্ষা, আয়, পেশার তথ্য এবং তাদের কতবার ডাক্তার দেখাতে হয়েছে, কতবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে, বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত চিকিৎসার ফলাফল বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আর তারপর, সেই বিশ্লেষিত তথ্য ভাণ্ডারকে গবেষকরা শব্দে রূপান্তরিত করেছেন এবং সেগুলি ‘লাইফটুভেক’ (life2vec) নামে একটি বৃহৎ ভাষাভিত্তিক এআই মডেলে ভরে দিয়েছেন।
নেচার কম্পিউটেশনাল সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণা সম্পর্কে এক নিবন্ধ প্রকাশিুত হয়েছে। গবেষণার পরের ধাপে, গবেষকরা পরীক্ষা করেন, তাঁদের দেওয়া তথ্য ব্যবহার করে, এআই মডেলটি কি মানুষের মৃত্যুর সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে? এর জন্য ৩৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী একদল মানুষের তথ্য সংগ্রহ করেন গবেষকরা। এই ব্যক্তিদের অর্ধেকের ২০১৬ থেকে ২০২০-র মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল। তাদের তথ্য দিয়ে, তাদের কে বেঁচে আছে আর কারা মারা গিয়েছে, তার ভবিষ্যদ্বাণী করতে বলা হয়েছিল এআই মডেলটিকে। ফল আসে চমকে দেওয়া। দেখা যায়, ৭৮ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে এআই! অন্যতম গবেষক সুনে লেহম্যানের মতে, এআই-এর সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করার থেকেও, বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল, এই গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, মানুষের জীবনকে বিভিন্ন ঘটনার একটি দীর্ঘ ক্রম হিসাবে বিবেচনা করা সম্ভব। যেভাবে একটি বাক্য গঠিত হয় একাধিক শব্দ দিয়ে। মানুষের জীবনও সেই রকম বিভিন্ন ঘটনাক্রম দিয়ে সাজানো।
‘লাইফটুভেক’-এর ভবিষ্যদ্বাণীতে ধরা পড়েছে, সমাজের নেতৃত্বের স্থানে থাকা বা উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের বেশিদিন বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অন্যদিকে, পুরুষ, দক্ষতা বেশি থাকা বা মানসিক রোগ থাকলে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। সুনে লেহম্যান বলেছেন, এই ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তির অতীতের পরিস্থিতি এবং ঘটনাগুলির উপর ভিত্তি করে তার ভবিষ্যত সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে, জীবন বীমা সংস্থাগুলির হাতে পড়লে, এই এআই মডেলের অপব্যবহার হতে পারে, বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। এছাড়া, সংবেদনশীল তথ্য রক্ষা, গোপনীয়তা রক্ষার মতো নৈতিক সমস্যা রয়েছে লাইফটুভেক ব্যবহারের ক্ষেত্রে।