ফিজান্ট দ্বীপ: বিশ্বের প্রতিটি দেশেরই নাগরিকত্ব পাওয়ার আলাদা আলাদা নিয়ম থাকে। সেই দেশে যারা জন্মায়, তারা তো সেই দেশের নাগরিক হনই, তার বাইরেও আরও কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে সেই দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। কোনও দেশের বৈধ নাগরিকরাই শুধুমাত্র সেই দেশের সকল সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। অনেক দেশ, তাদের নাগরিকদের দ্বৈত নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ দেয়। অর্থাৎ, তাঁরা একই সঙ্গে দুটি দেশের নাগরিক হতে পারেন। অনেক দেশে আবার, কোনও নাগরিক অন্য কোনও দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে, আগের দেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়। কিন্তু, প্রতি ৬ মাস অন্তর নাগরিকত্ব বদলে যায়, এমন কখনও শুনেছেন?
মানে ধরুন, আপনি এখন ভারতের নাগরিক, ছয় মাস পর হয়ে গেলেন পাকিস্তানের নাগরিক। রাতে ঘুমোতে গেলেন ভারতীয় হয়ে, সকালে ঘুম থেকে উঠলেন পাকিস্তানি হয়ে। শুনে অবাক লাগছে তো? ভাবছেন, এমন আবার হয় নাকি। যতই আশ্চর্য লাগুক, এমনটাই হয় ফ্রান্স এবং স্পেনের সীমান্তে অবস্থিত ফিজান্ট দ্বীপের বাসিন্দাদের সঙ্গে। স্পেন এবং ফ্রান্স – দুই দেশের সঙ্গেই সীমানা ভাগ করে নেয় দ্বীপটি। এই দ্বীপের এক অনন্য ঐতিহ্য রয়েছে। এই দ্বীপে বসবাসকারীদের নাগরিকত্ব প্রতি ৬ মাস অন্তর বদলে যায়। এখানকার লোকেরা বছরের ৬ মাস থাকেন স্পেনীয়, বাকি ৬ মাস তাঁরা হয়ে যান ফ্রান্সের নাগরিক। এর জন্য স্পেন ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি চুক্তিও রয়েছে।
এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৬৫৯ সালে। একে বলা হয় পাইরেনিস চুক্তি। তার আগে বেশ কয়েক বছর ধরে দ্বীপটির দখল নিয়ে যুদ্ধ চলেছিল। যুদ্ধের সমাপ্তকি ঘটিয়েছিল এই চুক্তি। চুক্তি অনুসারে, ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই, স্পেনের রাজা চতুর্থ ফিলিপের কন্যাকে বিয়ে করেন। আর ঠিক হয়, ফিজান্ট দ্বীপ ৬ মাস করে করে ফ্রান্স এবং স্পেনের দখলে থাকবে। তারপর থেকে এখানকার মানুষের নাগরিকত্ব প্রতি ৬ মাস অন্তর পরিবর্তিত হয়। ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত দ্বীপের বাসিন্দাদের উপর কায়েম থাকে স্পেনের নিয়ম। এরপর, অগস্ট থেকে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত এখানে চলে ফরাসি শাসন।