South China Sea: দক্ষিণ চিন সাগরে আধিপত্য বাড়াচ্ছে বেজিং, ঘুম উড়েছে আমেরিকার
South China Sea: সম্প্রতি দক্ষিণ চিন সাগর, পূর্ব চিন সাগর ও পীত সাগরে জোড়া বিমানবাহী রণতরী নিয়ে মহড়া দিয়েছে চিন। একইসঙ্গে দু-দুটো এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়র থেকে যুদ্ধবিমানের ওঠানামা অভ্যাস করেছে তারা। অত্যন্ত জটিল ও বিরল এই মহড়ায় নৌবাহিনীর একাধিক বিভাগকে সামিল করেছিল চিন।
শেষ কথা বলার সময় এখনও না এলেও, কথা যতটুকু এগিয়েছে, তাতে চিন্তায় পড়ে গিয়েছে আমেরিকা। সাগরে মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে চিনের আগ্রাসন ঠেকাতে তিনটে প্রায়োরিটি ঠিক করেছিল তারা। প্রজেক্ট থার্টি থ্রি, প্রজেক্ট নাইন ওয়ান নাইন টু এবং প্রজেক্ট পিপি। মানে ভারত মহাসাগর, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা ও পাপুয়া নিউগিনিতে নতুন নৌসেনা ঘাঁটি এবং ভারত মহাসাগর এলাকায় মাল্টি-ডাইমেনশনাল সেনাঘাঁটি। এইসব প্রকল্পে ভারতকে পাশে পাওয়ার আশা করেছিল মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু, ভারত-চিন সীমান্ত সমঝোতা হতেই ভারত মহাসাগর নিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছে তারা। ভারত-চিন সমঝোতা নিয়ে মার্কিন বিদেশমন্ত্রকের কাছে তথ্য চেয়েছিল সেনেটের বিদেশ বিষয়ক কমিটি। বাইডেন প্রশাসন কংগ্রেসকে জানিয়েছে, এখনও এব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তাদের হাতে নেই।
সম্প্রতি দক্ষিণ চিন সাগর, পূর্ব চিন সাগর ও পীত সাগরে জোড়া বিমানবাহী রণতরী নিয়ে মহড়া দিয়েছে চিন। একইসঙ্গে দু-দুটো এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়র থেকে যুদ্ধবিমানের ওঠানামা অভ্যাস করেছে তারা। অত্যন্ত জটিল ও বিরল এই মহড়ায় নৌবাহিনীর একাধিক বিভাগকে সামিল করেছিল চিন। চিনের নৌ-বাহিনী নিঃসন্দেহে এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা। তার ওপর আবার সাউথ চায়না সি-তে এই ধরনের মাসল ফ্লেক্সিং। এমন একটা অবস্থায় মার্কিন সেনেটের বিদেশ বিষয়ক কমিটির আশঙ্কা, চিনের নৌ-সেনা যেভাবে নিজেদের শক্তি বাড়াচ্ছে তাতে ভারত মহাসাগর এলাকায় পরিস্থিতি আমেরিকার অনুকূলে নাও থাকতে পারে। পিএলএ-র ন্যাভাল ফোর্স যে ভারতের কাছেও থ্রেট, তা আকারে-ইঙ্গিতে মনে করিয়ে দিয়েছেন মার্কিন সেনেটররা। যদিও প্রশ্ন, ভয়টা আসলে কার? ভারত নাকি আমেরিকার?
নৌ-বাহিনী গড়ে তুলতে বছরের পর বছর সময় লাগে। প্রতিরক্ষা মহলের মতে, মাঝারি থেকে আধুনিক নৌ-শক্তি হয়ে উঠতে যে কোনও দেশের কম করে ৩৫-৪০ বছর লাগবে। চিন সেই কাজটা করেছে ২৫ বছরে। মাঝারি মানের নৌ-শক্তি থেকে আড়াই দশকে দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও শক্তিশালী নৌ-বহর গড়ে তুলেছে চিন।
এই খবরটিও পড়ুন
গ্লোবাল নাভাল পাওয়ার ব়্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বরে আমেরিকা, দুইয়ে চিন। তবে আমেরিকার থেকে চিনের হাতে বেশি যুদ্ধজাহাজ। ৮০ হাজার টনের বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ফুজিয়ান, দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নজরদার জাহাজ সিসিজি ৫৯০১- কী নেই চিনের ভাঁড়ারে। শক্তিশালী নৌ-সেনা তৈরির পর এখন চিন আগ্রাসী। তার নজর অন্য দেশের জলসীমা দখল, আন্তর্জাতিক জলসীমার স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্টগুলো কব্জা করা। চিন জানে, ভারত মহাসাগরে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় আমেরিকা ছাড়া তাকে চ্যালেঞ্জ ছোড়ার মতো কেউ নেই। ২০০০ সাল থেকে ভারত ও আমেরিকা যতগুলো যুদ্ধজাহাজ যোগ পেয়েছে, চিন একাই তার থেকে বেশি যুদ্ধজাহাজ কমিশনড করেছে।
চিনের হাতে ৩৭০টির বেশি অ্যাকটিভ যুদ্ধজাহাজ। বছরে গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি নতুন যুদ্ধজাহাজ পাচ্ছে পিএলএ। ২০২৪-র অগস্টে পেন্টাগনের অ্যানুয়াল রিপোর্টে বলা হয়, নৌ-বহরের বিচারে কয়েকটি ক্ষেত্রে আমেরিকাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে চিন।
চিনের দক্ষিণ উপকূল ঘেঁষা বিস্তীর্ণ জলরাশি- দক্ষিণ চিন সাগর। দক্ষিণ চিন সাগরকে ঘিরে রয়েছে সাত-সাতটি দেশ। ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, ফিলিপিন্স, চিন এবং তাইওয়ান। তাদের মধ্যে জলের ভাগ নিয়ে চলছে নিত্য ঝগড়া। দক্ষিণ চিন সাগরের সবথেকে বড় অংশটি দাবি করে চিন। একটি কাল্পনিক রেখার মাধ্যমে চিন তাদের সীমানা চিহ্নিত করে রেখেছে। এই রেখার নাম নাইন ড্যাশ লাইন। এটা চিনের হাইনান থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দক্ষিণ এবং পূর্বদিক পর্যন্ত বিস্তৃত।
এই জলভাগে অন্য কোনও দেশের অধিকার আছে বলে মনে করে না শি জিনপিং-এর সরকার। উল্টে প্রতিদিন দক্ষিণ চিন সাগরে জমি জবরদখল চালিয়ে যাচ্ছে বেজিং। উপগ্রহ চিত্রে দেখা গেছে, প্রবালপ্রাচীরে ঘেরা ছোট্ট পাথুরে দ্বীপের এলাকা কৃত্রিম ভাবে বাড়িয়ে সেটিকে সামরিক ঘাঁটি বানানোর উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। কেন এসব করছে তারা? এক, স্বভাবজাত কারণে। আর একটা বড় কারণ, দক্ষিণ চিন সাগরের তলায় রয়েছে বহুমূল্য তেলের খনি। দক্ষিণ চিন সাগরের নীচে রয়েছে খনিজ তেলের বিপুল সম্ভার। এর আনুমানিক পরিমাণ প্রায় ২৮০০ কোটি ব্যারেল। এ ছাড়া, এখানে প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে প্রায় ২৬৬ লক্ষ কোটি ঘনফুট।
ইউএন ওয়াটার কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের মোট বাণিজ্যের ৩০ শতাংশ এই সমুদ্র পথে হয়। বছরে ৩ লক্ষ কোটি ডলারের পণ্য পরিবহণ হয়। বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহৃত জাহাজপথ। ভারতীয় পণ্যবাহী জাহাজও দক্ষিণ চিন সাগরের উপর দিয়ে যাতায়াত করে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই সমুদ্রপথে কর্তৃত্ব বজায় রেখে বিশ্ববাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বেজিং। তার জন্য নানা কলকাঠি নেড়ে চলেছে তারা। নিজেদের শক্তিশালী নৌ-বহরকে কাজে লাগাচ্ছে।