কথায় আছে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতি জলে ভেজা আয়নার মতো। যতটা দেখা যায়, তার থেকে অনেক বেশি দেখা যায় না। ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষের আবহে বারবার ফিরে ফিরে আসছে সেই প্রসঙ্গ। ইজরায়েল ও হামাস সংঘর্ষে গোটা বিশ্ব দু-ভাগ হয়ে গিয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় ইজরায়েলের সমর্থনে পোস্টের বন্যা। আবার আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে প্যালেস্তাইনের সমর্থনে বিক্ষোভও হচ্ছে। আমেরিকা, ব্রিটেন সহ পশ্চিনী দুনিয়া স্বভাবতই ইজরায়েলের পক্ষ নিয়েছে। সেটাই হওয়ার ছিল ও হয়েছে। কিন্তু, অনেকেই আবার অবাক হচ্ছেন আরব লীগ ও তথাকথিত প্যালেস্তাইনপন্থীদের মতিগতি দেখে। এক ইরান ও লেবানন ছাড়া কোনও দেশই খোলাখুলি প্যালেস্তাইনের পাশে থাকার কথা জানায়নি। ইরান দু-দিন ধরে গলা চড়ালেও আজ সুর নামিয়েছে। এখন তাঁদের বক্তব্য, হামাসকে তারা সহযোগিতা করেনি।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনির বক্তব্য, হামলাকারীরা দারুণ কাজ করেছে। ওদের শুভেচ্ছা জানাই। তবে আমরা ওদের কোনও সাহায্য করিনি। ইজরায়েল কেন, কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর কোনও ইচ্ছে আমাদের নেই। আশা করব, আমাদের যুদ্ধে যেতে বাধ্য করা হবে না। আরব লীগ বরাবর প্যালেস্তাইনের প্রতি সহানূভূতিশীল। তাঁরাও এখনও পর্যন্ত চুপচাপ। এদিকে আরব লীগের বড়দাদা সৌদি আরব। পশ্চিম এশিয়া পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের বৈঠকেও তাঁরা খুব একটা সরব হয়নি। তা হলে ঠিক কি দাঁড়াচ্ছে? এই সঙ্কটের মুহূর্তে কী প্যালেস্তাইনকে ছেড়ে গেল আরব লীগ? নাকি তাঁরাও সঠিক সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে? উঠছে প্রশ্ন।
তবে অন্য একটা সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। নিউ ইয়র্ক টাইমসে এক মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ কলাম লিখে একটা ইন্টারেস্টিং দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, নতুন পশ্চিম এশিয়ার যে ভাবনা রূপায়িত করার কাজ চলছে, সেখানে প্যালেস্তাইনের কোনও গুরুত্ব নেই। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমীরশাহীর মতো দেশ ও ইজরায়েলকে নিয়ে নতুন এক জোটের পরিকল্পনা করা হয়েছে। পুরোটারই পিছনে প্রবলভাবেই রয়েছে আমেরিকা। এনিয়ে প্রাথমিক রূপরেখাও নাকি তৈরি। তাই প্যালেস্তাইন নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করছে না আরব লীগ। এই নতুন লীগ অফ নেশনের মধ্যে আর্থিক চুক্তির রূপরেখাও নাকি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। এই দাবি সত্যি না মিথ্যে তা নিয়ে জল্পনা চলছে। তবে গত মাসে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় নতুন এক জোটের কথাই বলেছিলেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী। সেইদিক থেকে এই সম্ভাবনা এখনই উড়িয়ে দেওয়া যায় না, বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।