বুয়েনস আয়রেস: অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন আর্জেন্টিনার ভাইস-প্রেসিডেন্ট। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে তাঁর বাসভবনের ঠিক বাইরে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ় ডি কির্চনার। সেই সময় আচমকাই ভিড়ের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বেরিয়ে এসে তাঁর মাথা থেকে মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে একটি হ্যান্ডগান ধরে। তারপর আর্জেন্টাইন ভাইস প্রেসিডেন্টকে হত্যার লক্ষ্যে ওই ব্যক্তি ট্রিগারে আঙুলের চাপও দিয়েছিল। কিন্তু, সৌভাগ্যক্রমে সেই অস্ত্রটি ‘জ্যাম’ হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত কোনও বিপদ ঘটেনি। অক্ষত রয়েছেন আর্জেন্টিনার ভাইস-প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ় ডি কির্চনার। বলাই বাহুল্য ওই বন্দুকধারীকে গ্রেফতার করেছে আর্জেন্টাইন পুলিশ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্রিস্টিনার বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতি মামলার বিচার চলছে। ঘটনার সময় তিনি আদালত থেকে ফিরছিলেন। আর্জেন্টাইন পুলিশ জানিয়েছে বন্দুকধারীর, একজন ৩৫ বছর বয়সী ব্রাজিলীয় নাগরিক বলে শনাক্ত করা হয়েছে। তার নাম ফার্নান্দো মন্টিয়েল। তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে, এখনও পর্যন্ত এই হামলার উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়। সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে বুয়েনস আইরেসে ক্রিস্টিনার বাড়ির বাইরে শয়ে শয়ে সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। সেই ভিড়েই মিশে ছিল ওই বন্দুকধারী।
ঘটনার বেশ কয়েকটি ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেগুলিতে দেখা যাচ্ছে, আর্জেন্টাইন ভাইস প্রেসিডেন্ট যখন তাঁর সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, সেই সময়ই ওই ব্যক্তি তাঁর মুখের সামনে একটি পিস্তল তুলে ধরছে। আতঙ্কিত রাজনীতিবিদকে দেখা যায় হাত দিয়ে তাঁর মাথা আড়াল করতে এবং সম্ভাব্য গুলির আঘাত এড়ানোর জন্য মাথা নিচু করতে। কিন্তু কোনও গুলি ছোটেনি। বন্দুকধারী ট্রিগার চাপার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তাকে পরাস্ত করে নিরাপত্তা কর্তারা। তার বন্দুকটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেটিতে পাঁচটি গুলি ছিল বলে জানা গিয়েছে।
El video del arma contra @CFKArgentina pic.twitter.com/8j1xpMnPoe
— Lautaro Maislin (@LautaroMaislin) September 2, 2022
এই ঘটনার পর, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জাতির উদ্দেশে এক ভাষণ দেন আর্জেন্টাইন প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ়। তিনি বলেন, “ক্রিস্টিনা বেঁচে আছেন শুধুমাত্র বন্দুকটি থেকে গুলি চলেনি বলে। সেটিতে পাঁচটি গুলি ছিল। কেন গুলি চলেনি, এখনও প্রযুক্তিগতভাবে সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ১৯৮৩ সালে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসার পরে সবচেয়ে গুরুতর ঘটনাগুলির একটি এই আক্রমণ। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিমত হতে পারি। আমাদের মধ্যে গভীর মতবিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু, যখন বিতর্ককে ছাপিয়ে যায় ঘৃণা, তখন তা হিংসার জন্ম দেয়। গণতন্ত্রে হিংসতার কোনও জায়গা নেই।” আর্জেন্টিনার নাগরিকদের নিরাপত্তা, গণতন্ত্র রক্ষা এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের লক্ষ্য়ে তিনি শুক্রবার জাতীয় ছুটি ঘোষণা করেছেন।
২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ দে কির্চনার। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হল, প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন, তিনি তাঁর নিজ রাজ্য পাটাগোনিয়াকে প্রতারণামূলকভাবে ‘পাবলিক ওয়ার্কস চুক্তি’ প্রদান করেছিলেন এবং সরকারি কোষাগারের অর্থ আত্মসাৎ করেছিলেন। দোষী সাব্যস্ত হলে, প্রাক্তন তাঁর ১২ বছরের কারাবাস এবং সেই সঙ্গে আজীবনের জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞার সাজা হতে পারে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, ৬৯ বছর বয়সী ক্রিস্টিনার বিরুদ্ধে আরও অনেকগুলি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেগুলিরও বিচার চলছে।