মেলবোর্ন: অস্ট্রেলিয়ায় মহাত্মা গান্ধীর ব্রোঞ্জ মূর্তি ভাঙচুরের চেষ্টা দুষ্কৃতীদের। মূর্তির থেকে গলা মাথা কেটে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে। ধারালো কিছু দিয়ে বারবার ঘষা হয়েছে গান্ধী মূর্তির গলার অংশে। ঘটনার জেরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সেখানকার প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে। দুষ্কৃতীদের এমন কাণ্ডে রীতিমতো হতবাক তাঁরা। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। দুষ্কৃতীদের এই ধরনের কাণ্ড অত্যন্ত অসম্মানজনক বলে মনে করছেন তিনি।
ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মহাত্মা গান্ধীর ওই ব্রোঞ্জ মূর্তিটি অস্ট্রেলিয়া সরকারকে উপহার দেওয়া হয়েছিল। মেলবোর্নের অস্ট্রেলিয়ান ইন্ডিয়ান কমিউনিটি সেন্টারের প্রাঙ্গনে ওই গান্ধী মূর্তিটি বসানো হয়েছিল। দিন কয়েক আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন নিজে উপস্থিত থেকে ওই গান্ধী মূর্তিটি উন্মোচন করেছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ভারতের কনসাল জেমালের রাজ কুমার এবং অন্যান্য অস্ট্রেলিয়ান রাজনীতিকরা।
এদিকে দুষ্কৃতীদের এই কাণ্ডের পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ঘটনার তীব্র নিন্দা করে জানিয়েছেন, “এই কাজে যেভাবে (মহাত্মা গান্ধীকে) অসম্মান করা হয়েছে, তা অত্যন্ত নক্কারজনক এবং হতাশাজনক।”
মরিসন আরও জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার মতো একটি দেশ, যা বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং বিভিন্ন দেশের মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে চলার দিক থেকে বিশ্বের সবথেকে সফল বহুসাংস্কৃতিক দেশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে, এমন একটি দেশে কোনওরকম সাংস্কৃতিক স্মৃতিসৌধের উপর হামলা মেনে নেওয়া হবে না। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন “যে কেউ এর জন্য দায়ী, তারা অস্ট্রেলিয়-ভারতীয় সম্প্রদায়ের প্রতি চরম অসম্মান দেখিয়েছে এবং এর জন্য লজ্জিত হওয়া উচিত।”
ব্রোঞ্জের তৈরি এই গান্ধী মূর্তিটি ভারত সরকার উপহার দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। ভিক্টোরিয়া পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার বিকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে (স্থানীয় সময় অনুযায়ী) এক বা একাধিক দুষ্কৃতী পাওয়ার টুল ব্যবহার করে গান্ধী মূর্তিটির শিরশ্ছেদ করার চেষ্টা করেছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, নক্স ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের গোয়েন্দারা ইতিমধ্যেই বিষয়টি তদন্ত করছেন। বেশ কয়েকজন সাক্ষীকে তথ্য নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য আবেদন করেছেন গোয়েন্দারা।
মেলবোর্নের প্রবাসী ভারতীয়রা এই ধরনের ঘটনাকে “অত্যন্ত অপমানজক কাজ” হিসেবে দেখছে এবং গোটা ঘটনায় ভীষণভাবে ব্যাথিত তাঁরা। স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমে ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনস অফ ভিক্টোরিয়ার সভাপতি সূর্য প্রকাশ সোনি বলেছেন, “ভারতীয়রা খুবই মর্মাহত এবং দুঃখিত। আমি বুঝতে পারছি না কেউ কেন এমন নিচু ধরনের কাজ করবে।”
তিনি আরও বলেন, ভিক্টোরিয়া প্রদেশের রোভিলের এই সেন্টারটিই হল এই প্রদেশের প্রথম ইন্ডিয়ান কমিউনিটি সেন্টার। প্রায় ৩০ বছরের চেষ্টার পর এটি তৈরি হয়েছিল।
অস্ট্রেলিয়া ইন্ডিয়া কমিউনিটি চ্যারিটেবল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ভাসান শ্রীনিবাসন বলেন ,”মূর্তিটি উন্মোচনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেউ এটিকে ভাঙচুর করার চেষ্টা করছে, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দুষ্কৃতীরা মূর্তির মাথা কেটে ফেলার চেষ্টা করছিল। ভিক্টোরিয়া প্রদেশে প্রায় ৩ লাখ ভারতীয়র বাস। আমি কখনও ভাবতে পারিনি যে ভিক্টোরিয়াতে এমন ঘটনা ঘটবে।”