Bangladesh Bijoy Dibosh: খাল কেটে ডাকা হচ্ছে পাকিস্তানকে, একবার ‘আয়নায়’ মুখ দেখুক বাংলাদেশ
Bangladesh Independence War: যে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য জান-প্রাণ লড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা, আজ সেই দেশই পাকিস্তানের প্রতি ভালবাসা দেখাচ্ছে। সরকার বদলের পরই ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে পাকিস্তানের দিকে। স্বাক্ষর করছে বাণিজ্য চুক্তি। এতদূর অবধি তাও মানা যায়! কিন্তু যুদ্ধে উসকানি?
রক্ত-সংগ্রামে অর্জিত স্বাধীনতা। আজ, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে এই দিনেই পাকিস্তানি সেনাকে হারিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। তবে এই জয় এত সহজে আসেনি। যখন বিপন্ন পূর্ব পাকিস্তান, অপারেশন সার্চলাইট চালাচ্ছিল পাকিস্তানি সেনা, সেই সময় সাহায্য চাওয়া হয়েছিল ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে। তিনি বাংলাদেশের আর্জিতে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে ভারতীয় সেনা পাঠিয়েছিলেন। ভারতের মিশন ক্যাকটাস লিলিই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিল স্বাধীনতা। সেই জয়কে উদযাপন করতেই বিজয় দিবস পালন। কিন্তু ৫৩ তম বিজয় দিবসে যেন সম্পূর্ণ আলাদা চিত্র। বিগত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যেভাবে বাংলাদেশে বিজয় দিবস পালন হয়েছে, তার সঙ্গে আজকের চিত্রের মিল নেই। সেদিন ভারতের সাহায্য বরাবরই স্বীকার করেছে, কিন্তু এবার বিজয় দিবসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূসের মুখে একবারও শোনা গেল না ভারতের নাম!
১৯৭১ সাল, ঢাকার রমনা রেসকোর্স। আজকের দিনেই পরাজিত পাকিস্তান সেনার প্রধান জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি তাঁর ৯৩ হাজার সৈন্যদের সঙ্গে নিয়ে ভারতীয় সেনার জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সেনা ও বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছিল ভারতের হাত ধরেই।
সেই সময় যদি ভারত সেনা দিয়ে সাহায্য না করত, তাহলে হয়তো ইতিহাসটাই অন্য কিছু হত। আত্মসমর্পণে বাধ্য হত না পাকিস্তানের সেনা। মুক্তিযুদ্ধ সাফল্যই পেত না। কিন্তু আজ বাংলাদেশ সেই সাহায্য ভুলেছে, প্রতিদানে পদে পদে মিলছে শুধু অপমান, হেনস্থা। যে পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করতে সাহায্য করেছিল ভারত, আজ সেই দেশকেই দখল করে নেওয়ার হুমকি দেয় ওপার বাংলার মৌলবাদীরা।
দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়ে আসল স্বাধীনতা ভুলল বাংলাদেশ?
প্রতি বছরই ১৬ ডিসেম্বরের জয়-কে স্মরণ করে বিজয় দিবস পালন করা হয়। কিন্তু এবারের বিজয় দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল কারণ বাংলাদেশ “দ্বিতীয় স্বাধীনতা” অর্জন করেছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে সংরক্ষণের বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের রূপ নিয়েছিল। এই আন্দোলনের ঝাঁঝের সামনেই টিকতে পারেনি হাসিনা সরকার। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে, দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তৈরি হয় নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। এই বিপ্লবকেই “দ্বিতীয় স্বাধীনতা”র আখ্যা দিয়েছিল আন্দোলনকারীরা। এখন যাবতীয় গর্ব এই লড়াই নিয়েই। এই দ্বিতীয় স্বাধীনতাই কি দেশের আসল স্বাধীনতার কথা ভুলিয়ে দিল?
কীভাবে বদলাল সংজ্ঞা?
ক্ষমতায় আসার পর কার্যত চোখে কাপড় বেঁধেছেন মহম্মদ ইউনূস। হিন্দু, সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার দেখেও তিনি দেখছেন না। ভারত সংখ্যালঘুদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে, উল্টো সুর গেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ভারতের অবদান স্বীকার করা তো দূর, বরং ভারতের বিরুদ্ধেই বিষোদগার করে যাচ্ছে মৌলবাদী নেতারা। সেগুলি তো চোখেই পড়ে না ইউনূসের।
শুধু তো তাই নয়। নিজের দেশেও বদল আনছেন ইউনূস। এ বছর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসও বিজয় দিবস পালন করেছেন। কিন্তু তা নমো নমো করে। প্রতি বছর যেভাবে সেজে ওঠে ঢাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ছবি দেখা যায় শহরের কোণে কোণে, এবার সবই অমিল। বিজয় দিবসের পতাকাতেও স্থান পেয়েছে জুলাই বিপ্লবে পুলিশের গুলির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে শহিদ হওয়া জামাত ইসলামির সদস্যের ছবি। এরপরই প্রশ্ন উঠেছে, বিজয় দিবসের সংজ্ঞা কি বদলে গিয়েছে?
আজকের বিজয় দিবসে ভারতের জন্য একটা শব্দও খরচ করেননি মহম্মদ ইউনূস। তাঁর ভাষণ জুড়ে ছিল ‘স্বৈরাচারী শাসক’ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আক্রমণ। কার্যত বিজয় দিবসের সংজ্ঞাকেই বদলে দিয়ে বলেছেন, এই বিজয় দিবস বিশেষ কারণ কয়েক মাস আগেই ‘পৃথিবীর ঘৃণ্যতম স্বৈরাচারী শাসককে’ পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছেন ছাত্র-যুবরা। তিনি বলেছেন, “নতুন বাংলাদেশ গড়ার শুভ সূচনা হয়েছে।”
১৯৪৭-এ যেমন বন্দে মাতরম বা জয় হিন্দ স্লোগান উঠেছিল, তেমনই বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে স্লোগান ছিল জয় বাংলা। সেই স্লোগানও বাতিল করতে উদ্যত ইউনূস সরকার। ক্ষমতা পেতেই সোজা আদালতে ছোটেন জাতীয় স্লোগান হিসাবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে বাতিল করতে।
প্রতি বছর ভারতেও বিজয় দিবস পালন করা হয়। সেখানে আসেন মুক্তিযোদ্ধারা। এবারের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ ছিল। শেষ পর্যন্ত চক্ষুলজ্জার ভয়ে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশের উপর চাপ তৈরি হওয়ায় অবশেষে বাংলাদেশের তরফে নয়জনের প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়।
পাকিস্তান প্রেম উথলে উঠছে বাংলাদেশের?
যে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য জান-প্রাণ লড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা, আজ সেই দেশই পাকিস্তানের প্রতি ভালবাসা দেখাচ্ছে। সরকার বদলের পরই ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে পাকিস্তানের দিকে। স্বাক্ষর করছে বাণিজ্য চুক্তি। এতদূর অবধি তাও মানা যায়! কিন্তু যুদ্ধে উসকানি? ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে উসকাতে কানে বিষ ঢালছে পাকিস্তান। সে দেশের মৌলবাদীরা নেতারা প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে বলছেন, “পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র বাংলাদেশেরও।”
১৯৭১-এ যেভাবে বাংলাদেশের জনগণ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল, তা বিশ্বের কাছে উদাহরণ। কিন্তু বাংলাদেশের যুব প্রজন্ম কি সেই দিনটা মনে রাখছে? ৫ অগস্টের পর থেকেই মুছে দেওয়া হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের অস্তিত্ব। পাঠ্যবই থেকে টাকা- সব জায়গা থেকেই সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে মুজিবরের ছবি। যেন ইতিহাসটাই আলাদা ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধুর কোনও অবদানই ছিল না। বা থাকলেও, তা নিয়ে গর্ব করার মতো কিছু নেই। এভাবে চলতে থাকলে, বাংলাদেশে আগামী বছর থেকে আদৌ পালিত হবে তো বিজয় দিবস? আর পাঁচটা দিনে পরিণত হবে না তো ১৬ ডিসেম্বরের দিনটা?