বাংলাদেশকে হাইকোর্ট দেখালেন ইউনূস, আরও শক্ত হল নিজের কুর্সি

Bangladesh: এই রায়ের ফলে দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের বিধান বাতিল হয়ে গেল। তার জায়গায় আসল নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা। গণভোটের বিধান পুনরায় চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন ইস্যুতে হতে পারে গণভোট।

বাংলাদেশকে হাইকোর্ট দেখালেন ইউনূস, আরও শক্ত হল নিজের কুর্সি
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস।Image Credit source: PTI
Follow Us:
| Updated on: Dec 17, 2024 | 3:56 PM

ঢাকা: বাংলাদেশে আবারও ফিরল গণভোট। বাদ হল গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন ব্যবস্থা। কার্যত আরও পাকা হল মহম্মদ ইউনূসের গদি। তাঁর অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে আঙুল তোলার জায়গা থাকল না। এ দিন আদালতে সাফ জানানো হয়, নির্বাচনের সময়ে থাকবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তারাই চালাবে দেশ ও নির্বাচন।  বাংলাদেশ সংবিধানের যে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়েছিল, তা বাতিল করে দেওয়া হয়।

আজ, মঙ্গলবার বাংলাদেশের হাইকোর্টে বলা হয়, “সংসদীয় কার্যপ্রণালীর ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আওয়ামি লীগের আগের ব্যবস্থাটি যথাযথ হয়নি”। এই রায়ের ফলে দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের বিধান বাতিল হয়ে গেল। তার জায়গায় আসল নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন। বলা হয়, “সংবিধান বহির্ভূতভাবে ক্ষমতা দখল সংক্রান্ত ৭(ক) ও (খ) অনুচ্ছেদও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ৭ মার্চ জাতির পিতা ও ২৬ মার্চ ইস্যু বহাল থাকবে। এগুলি পরবর্তী সংসদের বিষয়।”

বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে হাইকোর্ট বলে, “এটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলস্বরূপ বিশেষ ব্যবস্থার সরকার“। রায়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় চালুর পাশাপাশি সংবিধান বহির্ভূতভাবে ক্ষমতা সংবিধানের ৪২ (২) ধারা, যেখানে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা খর্ব করে নিম্ন আদালতকেও সুপ্রিম কোর্টের মতো ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, সেটি বাতিল হয়েছে এবং গণভোটের বিধান পুনরায় চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন ইস্যুতে হতে পারে গণভোট।

হাইকোর্ট জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বিষয়ে বলেন, “জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস এবং জনগণের এই শক্তির বহিঃপ্রকাশ কেউ ঠেকাতে পারবে না।” হাইকোর্ট আরও বলে, “একটি সংসদ আরেকটি সংসদের কোনও সংবিধান সংশোধন করতে পারে না এবং পরবর্তী সংসদ কী করবে-না করবে তা আগে থেকে বলা যায় না।”

আদালতের আরেকটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সময় এবং পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়েই সংবিধান সংশোধন করতে হয়।

২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয় বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন। ৩ জুলাই এই সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।

ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপের পাশাপাশি জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়েছিল। এছাড়া অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয়।

আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও, ওই সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।

সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে গত ১৮ আগস্ট সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চার ব্যক্তি হলেন- তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। পরদিন ওই রিটের শুনানি নিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কেন অবৈধ হবে না– তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

বিএনপি, জামায়াত, ইনসানিয়াত বিপ্লবসহ কয়েকটি দল এমন রায়ই চেয়েছিল। কারণ আগের ব্যবস্থা আওয়ামি লীগই বহাল করেছিল।