ঢাকা: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সঙ্গে-সঙ্গে দেশের ভার নিয়েছে সেনাবাহিনী। দেশের অশান্ত পরিস্থিতি শান্ত করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনেদের সঙ্গে বৈঠক করে অন্তর্বর্তী সরকার গড়ার ডাক দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। সেই বৈঠকে ছিলেন ড. আসিফ নজরুলও। যাঁর এই গণ আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এবার হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে শান্তি ফিরে আনতে এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনেও বিশেষ ভূমিকা নিতে চলেছেন ড. নজরুল।
কে ড. আসিফ নজরুল?
পেশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তবে কেবল অধ্যাপক বললে কম বলা হবে। তিনি একাধারে লেখক, ঔপন্যাসিক, রাজনীতি-বিশ্লেষক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ। তাঁর লেখা ১০টির বেশি বই রয়েছে। বিভিন্ন টিভি শো-তে সাহসী রাজনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য তিনি বিশেষভাবে খ্যাত ড. নজরুল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসাবে যোগদানের আগে বাংলাদেশ সরকারের এক পদস্থ কর্তা (ম্যাজিস্ট্রেট) এবং সাংবাদিক হিসাবে কাজ করেছেন ড. আসিফ নজরুল। এছাড়া মানবাধিকার সংস্থা, আইনের শাসন, পরিবেশগত সমস্যা ইত্যাদি ভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গেও উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। কর্মজীবনের গোড়া থেকেই তিনি পরোক্ষভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। তাঁকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সমালোচক বললেও ভুল হয় না। ২০১২ সালে এক টিভি শো-তে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অগণতান্ত্রিক শক্তিকে উসকানি দিয়েছেন অভিযোগে মামলাও হয় ড. নজরুলের বিরুদ্ধে। এমনকি তাঁকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। যদিও এসব কোনও কিছুরই পরোয়া করেননি ড. নজরুল। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হওয়ার পরেও ছাত্রদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বারবার সরব হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ-মিছিলেও দেখা যায় তাঁকে।
সম্প্রতি ছাত্রদের উপর সরকারের যে দমন-পীড়ন শুরু হয়েছিল, তার তীব্র প্রতিবাদ করেন ড. আসিফ নজরুল। হাসিনা সরকারকে রীতিমতো হুঁশিয়ারিও দেন। দিন কয়েক আগেই এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ছাত্রদের এই আন্দোলনকে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, “আমি সতর্ক করছি, অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে, যদি এই বাহিনী খুনি বাহিনী যেগুলো আছে সরকারের, এদের বিচার না করে, তাহলে এই গণ আন্দোলন শীঘ্রই সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হবে। এটা একটা গণ বিস্ফোরণ, গণ আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর থেকে ছাত্র-নেতাকে পিটিয়ে বের করা হয়েছে। জনধিক্কিত সরকার হওয়ার আগেই সতর্ক হন।”
আবার আন্দোলন যখন মারাত্মক রূপ নিতে শুরু করে, তখন বুক দিয়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের রক্ষা করার বার্তা দেন ড. আসিফ। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “কোনও হিন্দু এলাকা বা মন্দির যেন আক্রান্ত না হয়। তাদের বুক দিয়ে রক্ষা করুন। কোন ফাঁদে পা দেবেন না।”
সোমবার হাসিনা সরকারের পতনের পর সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন ড. নজরুল। বৈঠক শেষে তিনি ছাত্র-যুবদের ধৈর্য ধরা ও শান্তি স্থাপনের বার্তা দেন। এবার ‘সুসংবাদ আসবে এবং দেশ সঠিক পথে এগোবে’ বলে আশা প্রকাশও করেন তিনি। বলা যায়, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে বিএনপি নেতা ও সাহিত্যিক সালিমুল্লাহ খান এবং ড. আসিফ নজরুলের বিশেষ ভূমিকা থাকতে চলেছে।