ঢাকা: করোনা (Covid) আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে গেলেও অনেকেরই নানান সমস্যা থেকে যাচ্ছে। এমনকি গর্ভবতী মায়ের কোভিড আক্রান্ত হওয়ার প্রভাব ভ্রুণের উপরও পড়ছে বলে সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে। এবার কোভিড–১৯ আক্রান্ত ৩৪ শতাংশ মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে গিয়েছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম (Chattogram University) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Dhaka University) গবেষকদের করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমীক্ষা রিপোর্ট এবং গবেষণায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে। শুধু তাই নয়, ডায়াবিটিস রোগীদেরও কোভিড আক্রান্ত হৃওয়ার পর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা বেড়ে গিয়েছে বলে রিপোর্টে প্রকাশিত।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে ওঠা এমন কিছু মানুষের উপর সমীক্ষা চালিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অলক পালের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য দফতর ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করেন। সেই গবেষণার রিপোর্ট সম্প্রতি এশিয়া প্যাসিফিক পাবলিক হেলথ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ‘হাসপাতালে ভর্তি কোভিড-১৯ রোগীদের পরবর্তী শারীরিক জটিলতা ও অন্যান্য রোগের সম্পর্ক নিরূপণ’ শীর্ষক এই গবেষণাতেই কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
সমীক্ষা রিপোর্টে কী উঠে এসেছে?
২০২০ সালের মে থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া ১ হাজার ২০৭ জন কোভিড–১৯ রোগীর উপর এই সমীক্ষাটি হয়। যার মধ্যে ৬৫.৫ শতাংশ পুরুষ এবং তাঁদের বয়স ২৬ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার ছয় মাস পর তাঁদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় এবং ১৭টি বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে গবেষণাপত্রটি তৈরি করা হয়। সমীক্ষা রিপোর্টে উঠে এসেছে, কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পর ৩৪ ভাগ রোগীর স্মৃতিশক্তি কমে গিয়েছে। এই সমস্যাটা তাঁদের আগে ছিল না। এছাড়া ২৮ শতাংশের ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে না। আবার সামান্য পরিশ্রম করলেই ৫৫ ভাগের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে।
গবেষণায় আরও জানানো হয়েছে, যাঁদের আগে থেকেই নানান শারীরিক সমস্যা ছিল, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর সেই সমস্যা আরও বেড়ে গিয়েছে। যেমন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সমীক্ষায় অংশ নেওয়া কোভিড রোগীদের ৬২ শতাংশের আগে থেকে নানারকম শারীরিক জটিলতা ছিল। এর মধ্যে ৫০.৬ শতাংশ ডায়াবেটিসে ও ২০ ভাগ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন। এ ছাড়া ১৩ শতাংশ অ্যাজমা, ৮ শতাংশ লিভার ও পেটের রোগে এবং ৬ শতাংশ হৃদ্রোগের সমস্যা ছিল। এঁরা কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠতে অনেক সময় লেগেছে। তারপর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও তাঁদের সমস্যাগুলি আরও প্রকট হয়েছে। যেমন, যাঁরা কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন, তাঁদের কারও কারও কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর ডায়ালিসিস নিতে হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা আরও জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছেন। যাঁদের হৃদ্রোগের সমস্যা ছিল, তাঁদের সমস্যাও আরও প্রকট হয়েছে। এপ্রসঙ্গে অলক পাল বলেন, “পুরুষের তুলনায় নারীদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেশি হয়েছে। আর অ্যাজমা রোগীদের আগের চেয়ে অ্যাজমা তিন গুণের বেশি বেড়েছে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে।”
উল্লেখ্য, কোভিড-পরবর্তী সমস্যা সংক্রান্ত গবেষণা ও সমীক্ষায় অলক পালের নেতৃত্বে যুক্ত ছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মহম্মদ মহিউদ্দিন শরিফ, মহম্মদ শফিকুল বারি ও মহম্মদ টিটু মিঞা। এ ছাড়া স্বাস্থ্য দফতরের পরিচালক অধ্যাপক রোবেদ আমিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনার্ধন মোহান্ত ও সেন্টার ফর পার্টিসিপারি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মহম্মদ আকিব জাবেদ।