ঢাকা: বাংলাদেশের কনটেইনার ডিপোয় অগ্নিকাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪৯। তবে, সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্ধারকারীরা। দেহগুলি উদ্ধার করে আনা হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী হাসপাতালে নিযুক্ত বাংলাদেশ পুলিশের এক কর্তা বলেছেন ‘এখনও পর্যন্ত মর্গে ৪৯ জনের দেহ আনা হয়েছে’। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেও বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড এলাকার এই ঘটনায় আরও অন্তত ৪৫০ জন মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের পাশাপাশি চট্টগ্রামের অন্যান্য হাসপাতালেও অনেককে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
গত রাত থেকেই কয়েকশো দমকল কর্মী আগুন নেভানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু রবিবার বিকেল পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। চট্টগ্রাম দমকল বিভাগের এক কর্তা বলেছেন, ‘দমকলের ২৫ টি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই সঙ্গে ঘটনাস্থলে মজুত রয়েছে ৬টি অ্যাম্বুল্যান্স’। তবে, আগুন নেভানো এবং উদ্ধারের কাজ চলাকালীনও অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। কারণ, ডিপোটিতে রাখা একের পর এক রাসায়নিক কনটেইনারে বিস্ফোরণ ঘটেই চলেছে। এমনকী, বহু দমকল কর্মী, পুলিষ কর্মী, ঘটনাস্থল থেকে লাইভ কভারেজ করতে যাওয়া সাংবাদিকরাও অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। গোটা এলাকা এখনও ধোঁয়ায় ঢেকে রয়েছে। আগুন নিভানোর কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন উদ্ধার কর্মীরাও।
আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে দমকলের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। ২০১১ সালের মে মাস থেকে ওই কনটেইনার ডিপোটি চালু ছিল। মালিকদের পক্ষ থেকে সুরক্ষাজনিত সমস্ত পদক্ষেপ করা হয়েছিল কিনা, সেই সব বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই, দমকলের কাজে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে। দমকল কর্তাদের অভিযোগ, রবিবার দুপুর পর্যন্ত ঘটনাস্থলে তাদের কেউ আসেননি। ফলে ডিপোতে কী ধরনের রাসায়নিক মজুত আছে, তা বুঝতে পারছে না উদ্ধারকারীরা। দেরি হচ্ছে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে। তবে, দমকল বাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জন সেনা সদস্য উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন। সেই সঙ্গে, সেনার রাসায়নিক বিশেষজ্ঞরা দমকল বিভাগের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে হাত লাগিয়েছেন।
A very pathetic fire broke out in Chittagong, Bangladesh.
At least 30 people were killed and more than 200, including cops and fire service officials, injured after a fire broke out at a container depot in Chattogram’s Sitakunda on Saturday night. pic.twitter.com/kgX9JkiQRz— Kysar Hamid (@HamidKysar) June 5, 2022
স্থানীয় পত্রিকাগুলির প্রতিবেদনে দাবি করা করা হয়েছে, শনিবার রাতে ওই ডিপোতে এক বিরাট বিস্ফোরণ ঘটেছিল। সূত্রের দাবি, বিস্ফোরণের অভিঘাতে আশপাশের একটা বড় এলাকা জুড়ে ঘরবাড়ির জানলার কাচ ভেঙে গিয়েছিল। ওই বিস্ফোরণের পরই ছড়িয়ে পড়েছিল আগুন। পুলিশেও জানিয়েছে, শনিবার রাত ৯টা নাগাদ আগুন লেগেছিল। কিন্তু বিস্ফোরণ ঘটেছিল প্রায় মধ্যরাতে। তবে তারাও জানিয়েছে, বিস্ফোরণের পরই আগুন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ চৌকিতে নিযুক্ত এক পুলিশ কর্তা বলেছেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলেই এই ভয়ঙ্কর আগুন লেগেছিল’।
এদিকে চট্টগ্রামের এই বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি শোকগ্রস্ত পরিবারগুলির সদস্যদের প্রতিও গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। আহত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় সকল চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাসিনা।