বাংলাদেশ: প্রয়াত বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশের রাজশাহীর বাড়িতে প্রয়াত হন এই কথা সাহিত্যিক। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার হিসাবে তাঁর গুণমুগ্ধের সংখ্যা অগনিত। কিন্তু তাঁর জন্ম অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার যবগ্রামে। শুধু জন্মই নয়, হাসান আজিজুল হকের শৈশবও কেটেছে এপার বাংলাতেই। যবগ্রামে থেকেই ম্যাট্রিকুলেশন পর্যন্ত পড়াশোনা করেন হাসান আজিজুল হক।
ছ’য়ের দশকে বাংলার সাহিত্যপটে এই কথা সাহিত্যিকের আবির্ভাব। অসামান্য তাঁর গল্প বলার শৈলীতেই একের পর এক অমোঘ সৃষ্টি। হাসান আজিজুল হকের উপন্যাস আগুন পাখির ভক্ত শুধু ওপার বাংলা নয়, এ পার বাংলাতেও প্রচুর।
নিয়মিত বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম গল্পগ্রন্থ সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য। এ বইয়ের শকুন গল্পটি বিশেষ ভাবে প্রশংসা পেয়েছিল। একজন সুদখোর মহাজনকে সামনে রেখে এ গল্প। এ ছাড়াও তৃষ্ণা, উত্তর বসন্তে, বিমর্ষ রাত্রি, প্রথম প্রহর, পরবাসী, খাঁচা, ভূষণের একদিন, ফেরা, মন তার শঙ্খিনী, সরল হিংসার মতো গল্প মন ছুঁয়েছিল পাঠকের।
১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান তিনি। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদক সম্মানে সম্মানিত করে। ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
বাংলাদেশে পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করলেও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অবিচ্ছেদ্য। সেই স্মৃতিই এদিন মনে করছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার খুব প্রিয় মানুষ, প্রিয় লেখক উনি। আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কও খুব ভাল ছিল। আমি ওনার রাজশাহীর বাড়িতে গিয়েছি। অনেক দিনের পুরনো বন্ধু। তাঁর লেখা সত্যিই ব্যাতীক্রমী। একদম অন্য ধারার লেখা লিখতেন। কী বলব! তাঁর এই প্রয়াণে শুধু বাংলাদেশের সাহিত্য নয়, আমাদের এপার বাংলারও, গোটা বাংলা সাহিত্য জগতেরই ক্ষতি হল। তাঁর পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আমি নিজেও শোকস্তব্ধ।”
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন সেবার। হাসান আজিজুল হকও গিয়েছিলেন সেখানে। সেদিনের স্মৃতিচারণায় শীর্ষেন্দুবাবু বলেন, “আমরা একবার শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলাম। খুব মনে পড়ছে। পাশাপাশি ঘরে আমরা ছিলাম। অনেক আড্ডা হয়েছিল। কথা হয়েছিল। গান শোনা হল। এত সুন্দর কথাবার্তা বলতেন, অনেক খোঁজ খবর রাখতেন। খুব প্রাণোচ্ছ্বল মানুষ ছিলেন। ওনার বাড়িতেও যখন গিয়েছি, এত আন্তরিকতা। কী আদর আপ্যায়ণ। আন্তরিকভাবে খুশি হয়েছিলেন আমি যাওয়ায়। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ছিলেন। বাংলাদেশ হওয়ার পর সেখানে চলে যান। মনে হয় বাংলাদেশ হওয়ার আগেই পূর্ব পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন। অনেক স্মৃতি রয়েছে। দেখা খুব হতো এমন নয়। কারণ আমি ঢাকা গিয়েছি, উনি থাকতেন রাজশাহী। তবে শান্তিনিকেতনে একসঙ্গে দু’ তিনদিন ছিলাম। সেই সব স্মৃতি আজ খুব মনে পড়ছে।”
আরও পড়ুন: KMC: সম্পত্তি কর দেন তো সময়মতো? এবার থেকে না দিলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চলেছে কলকাতা পুরসভা