ঢাকা : ‘তাঁরা’ সমাজে সবসময় অবহেলিত। এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও সমাজ তাঁকে এক কোণে ফেলে রাখে। আমরা মুখে যতই আধুনিকতা, সমতার বুলি কপচাই না কেন কোথাও গিয়ে আমরাও বাঁকা চোখে তাকাই ‘তাঁদের’ দিকে। বিশ্ব জুড়ে আন্দোলন হয়েছে তাঁদের সমাজের মূল স্রোতের সঙ্গে মেশার অধিকার দেওয়ার জন্য। খাতায় কলমে আইন প্রণয়ন এবং আইন বাতিল হলেও সমাজে বাস্তবিক মর্যাদা ‘তাঁরা’ ফিরে পাননি। যতই ‘তাঁরা’ মাথা তুলে দাঁড়াতে চান। সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তত সমাজ তাঁদের দূরে ঠেলে দেয়। সমাজে যে তাঁরা কীভাবে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হয় তার আবার প্রমাণ মিলল বাংলাদেশের একটি ঘটনায়।
ঢাকার এক বিউটি ব্লগারকে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় মামলাও দায়ের হয়েছে। দায়ের হওয়া মামলার ভিত্তিতে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশের ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (ব়্যাব)। রবিবার ঢাকার ফার্মগেট ও মহাখালি এলাকা থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে ব়্যাব। বাংলা নিউজের প্রতিবেদন সূত্রে খবর, ব়্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি ইমরান খান জানিয়েছেন, ট্রান্সজেন্ডার বিউটি ব্লগারকে যৌন নির্যাতন ও হত্যার চেষ্টার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় মূলহোতা ইশতিয়াক আমিন ফুয়াদ সহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার তিনজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পরে ব়্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক জানিয়েছেন, মূলত প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া তাদের পেশা। গত ২১ জানুয়ারি যৌন নির্যাতন ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগে ব্লগার রেহানা মুআ (নাম পরিবর্তিত) ঢাকার ভাটারা থানায় মামলা দায়ের করান।
বাংলাদেশের একজন ট্র্যান্স জেন্ডার মেকআপ আর্টিস্ট রেহানা মুআ (নাম পরিবর্তিত)। মেকআপ টিউটোরিয়াল-সহ বিউটি কেয়ারের বিভিন্ন ধরনের ভিডিয়ো কনটেন্ট বানান তিনি। তারপর সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন। এইভাবেই ভাইরাল হয়ে পড়েন মেকআপ আর্টিস্ট রেহানা মুআ (নাম পরিবর্তিত)। মেকআপ করিয়েই পরিচিতি পান ‘বাংলাদেশের প্রথম পুরুষ বিউটি ব্লগার’ হিসেবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে একজন নন-বাইনারি হিসেবে পরিচয় দেন সাদ। নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূরে সরিয়ে ‘নন-বাইনারি’ পরিচয় নিয়ে সমাজে চলতে প্রতিনিয়ত নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ছেন সাদ। তবে পরিবার পাশে থাকায় পথ চলা অনেকটা সহজ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার একটা ক্ষুদ্র অংশ। দেশের সমাজসেবা অধিদপ্তরের জনগণনা অনুযায়ী বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডারের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। তাঁরা সমাজে প্রথম দিন থেকেই অবহেলিত, নির্যাতিত।
আরও পড়ুন : Bangladesh News:’দাবি না মানলে জরুরি পরিষেবা বন্ধ,’ উপাচর্যের পদত্যাগের দাবিতে আরও কঠোর আন্দোলনকারীরা