ঢাকা: ব়্যাগিংয়ের জেরে ছাত্রের মৃত্যু। এই অভিযোগ নিয়ে এখনও বিতর্কের আগুন নেভেনি এপাড়ে। এবার, ওপাড় বাংলা, অর্থাৎ, বাংলাদেশেও একই ধরনের এক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উসকে উঠল বিতর্ক। তবে, ঘটনাটা বাংলাদেশে ঘটনি। ঘটেছে মালয়েশিয়ায়। সেখানে পড়তে যাওয়া এক বাংলাদেশি যুবক র়্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন এবং অবশেষে তাঁর রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ, প্রথমে ছেলে নদীতে ডুবে মারা গিয়েছে বলেই শুনেছিলেন শাহিদা আক্তার। কিন্তু, ছেলের দেহ মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে এসে পৌছনোর আগেই তাঁদের হাতে এসে পড়ে এক ভিডিয়ো ফুটেজ। যা এলোমেলো করে দিয়েছে ঘটনার আগের বয়ান।
২০২২-এর অগস্টে, মালয়েশিয়ার সারাওয়াক রাজ্যের কুচিং শহরের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিউম্যান রিসোর্স অব ম্যানেজমেন্ট পড়তে গিয়েছিলেন ২১ বছরের ইরফান সাদিক। তারপর থেকে তাঁর সঙ্গে নিয়মিত ভিডিয়ো কলে কথা হত ইরফানের মা শাহিদা আক্তারের। তিনি জানিয়েছেন, সপ্তাহখানেক আগে থেকে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ছেলের মানসিক অবস্থা ভাল নয়। তবে, তাঁকে কিছুতেই কিছু বলতে চাননি ইরফান। এড়িয়ে গিয়েছেন। তবে, ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর এক মেসোকে ফোন করে তাঁকে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানিয়েছিলেন ইরফান। ঠিক তার আগের দিন (১৭ সেপ্টেম্বর) মাকে বলেছিলেন, মালয়েশিয়ায় তিনি কাউকে একটা টাকা ধার দিয়েছেন। সেই টাকা আর ফেরত পাাচ্ছেন না। কেউ তাঁর মাথার চুল অল্প একটু কেটে দিয়েছে বলে, তিনি পুরো চুলই একেবারে ছোট করে ছেঁটে ফেলেছেন। কেউ নাকি তাঁকে ভূতের ভয় দেখায়, রাতে ঘুমাতে দেয় না। তাই তিনি বাধ্য হয়ে মসজিদে থাকেন।
১৮ সেপ্টেম্বরই শাহিদা আক্তারকে ফোন করে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইরফানের মৃত্যু সংবাদ দিয়েছিল। তারা জানিয়েছিল, নদীতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ইরফানের। সেখান থেকেই তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দেহের কাটাছেঁড়া ছায়নি তার পরিবার। তাই ময়নাতদন্ত করা হয়নি। ২৫ সেপ্টেম্বর ইরফানের দেহ বাংলাদেশে এসে পৌঁছয়। তবে, তার আগেই তার পরিবারের হাতে এসেছিল একটি ভিডিয়ো ফুটেজ। যাতে দেখা গিয়েছে ইরফানকে অকথ্য অত্যাচার করা হয়েছিল। সম্ভবত যৌন নির্যাতনও করা হয়েছিল। তাঁকে প্রায় বিবস্ত্র করে র্যাগিং করতে দেখা গিয়েছে কিছু যুবককে।
এরপরই ছেলেহারা মা বলেছেন, “আমার ছেলেকে কারা বিবস্ত্র করল? কারা র্যাগিং করল? বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিয়ো রেকর্ড করল, অথচ ছেলেটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করল না। আমার ছেলেকে র্যাগিং করে যারা মেরে ফেলল, সেই কালপ্রিটদের আমি চেহারা দেখতে চাই।’ নির্যাতনের ভিডিয়ো দেখার পর, ছেলের মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। কেন মারা গেল, কীভাবে মারা গেল, কারা ছেলেকে র্যাগিং করেছিল – উত্তর চাইছেন শাহিদা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ভিডিয়ো ফুটেজটি পাঠিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা বিষয়টি দেখছে।
এদিকে, মালয়েশিয়ার অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেহ দেশে পাঠানোর পর, ইরফানের পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্ত চাওয়া হয়েছে। ফলে ময়নাতদন্ত করার সুযোগ ছিল না। এই পরিস্থিতিতে তারা ইরফানের পরিবারকে, বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর দেহের ময়নাতদন্ত করে, তার প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। প্রয়োজনে ওই প্রতিবেদনই তদন্তের জন্য মালয়েশীয় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। তারা আরও বলেছে, ইরফান কয়েক মাস ধরেই বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন। তাঁর পরিবার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও এই বিষয়ে জানত। কিন্তু, কোনও পক্ষই তাঁকে যথেষ্ট সমর্থন দেয়নি। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে একটি ভিডিয়োও প্রকাশ করা হয়েছে। সেই ভিডিয়োতে ইরফানকে একটি মসজিদের বারান্দা থেকে, পার্শ্ববর্তী নদীতে লাফ দিতে দেখা গিয়েছে। আশপাশে বহু মানুষ, এমনকি পুলিশ থাকলেও তাঁকে কেউ বাঁটানোর চেষ্টা করেননি। ঘটনাটি মালয়েশিয়ার মেইনল্যান্ড থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে অন্য এক রাজ্যে ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে।