ঢাকা ও মুম্বই : গত মাসে মোবাইল ফোন র্যাকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে গ্রেফতারি চালায় মুম্বই পুলিশ। সেই ব়্যাকেটে বাংলাদেশ যোগ ছিল বলেও জানা গিয়েছিল। এই ঘটনার পর থেকেই প্রশ্ন তৈরি হয় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কীভাবে শহর ভিত্তিক কুরিয়ার কোম্পানি ও গ্রামবাসীরা অন্যান্য প্রতিবেশী দেশে এই মোবাইল পাচার করতে সাহায্য করছে।
গত মাসের প্রথম সপ্তাহে মুম্বই অপরাধ দমন শাখা ১০ জন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে ২২ লক্ষ টাকার ১৩৫ টি চোরা মোবাইল পাওয়া গিয়েছিল। তাদের বিবৃতির উপর ভিত্তি করে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয় এই চোরা মোবাইল পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ। এই তিনজনের মধ্যে একজন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছাকাছি ত্রিপুরার একটি গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ত্রিপুরার বাসিন্দা এই ব্যক্তিই পুলিশকে পুরো গল্পটা খুলে বলেছে। বাংলাদেশে কীভাবে চোরাচালান হয় এই ফোনগুলি সেই বিষয়ে আলোকপাত করেছে সে। আধিকারিক জানতে পেরেছেন, প্রথমে মুম্বই থেকে মোবাইল ফোন চুরি হয়। তারপর সেই চোরা ফোনের ছবি তুলে সেই ছবি এবং মোবাইল সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দেওয়া হয়। সেই গ্রুপে বাংলাদেশ এমনকি নেপালের কিছু নাগরিকও রয়েছেন। সেখান থেকে কেউ ওই চোরা ফোন পছন্দ করলে তা বাংলাদেশে পাঠানোর উদ্দেশে প্যাকিং করা হত।
এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘তারপর বাক্সগুলি দক্ষিণ মুম্বইভিত্তিক একটি কুরিয়ার সংস্থায় পাঠানো হয়। যার ত্রিপুরার আগরতলাতেও অফিস রয়েছে। অভিযুক্তরা আগরতলায় অর্ডার সংগ্রহ করে এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মধ্য দিয়ে সেদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হত।’ তিনি আরও জানিয়েছন, বাংলাদেশ থেকে এই চোরা কারবারের সঙ্গে যুক্ত তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের কাজ এসব চোরাই ফোন সংগ্রহ করে নিজের দেশে বিক্রি করা। তাঁর আরও সংযোজন, ‘অপরাধীরা ভারতের বাইরে ফোন বিক্রি করে যাতে তাদের সেলফোনের IMEI নম্বর মুছে ফেলার জন্য অর্থ ব্যয় করতে না হয়। কারণ এই IMEI নম্বরের মাধ্যমেই তাদের ধরা যেতে পারে। একবার ফোনটি অন্য দেশে চলে গেলে পুলিশরা IMEI নম্বর দিয়ে বেশি কিছু করতে পারেন না।’
পুলিশ আধিকারিক আরও জানিয়েছেন যে, সম্প্রতি IMEI নম্বর মুছে ফেলার মতো অবৈধ পরিষেবা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারপর অপরাধীদের সীমান্তের ওপারে চোরাই ফোন পাঠানোর প্রবণতা আরও বেড়েছে। ওই কর্মকর্তা জানান, এখনও পর্যন্ত তাঁরা এক কোটি টাকার চুরি হওয়া ফোন উদ্ধার করেছেন। পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘যদিও আমরা এই অভিযানের অংশ হিসাবে তিনজন বাংলাদেশী নাগরিককে শনাক্ত করেছি। আমাদের বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে যাতে তারা এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নিতে পারে। আমরা কীভাবে এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এগোতে পারি সে বিষয়ে আইনি মতামত নিচ্ছি।’