ঢাকা: ফের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ ঢাকার মহম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লাগে। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার লড়াইয়ের পর, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে, প্রত্যক্ষদরা জানিয়েছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনও বিভিন্ন জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। ১৮টি সোনার দোকান-সহ প্রায় পাঁচশ দোকান পুড়ে গিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে এই বাজারে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০টি দোকান ছিল। রাতে আগুন লাগার পর প্রথমে দমকল বিভাগের ৭টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। পরে পরিস্থিতির গাম্ভীর্য উপলব্ধি করে একসঙ্গে ১৭টি ইঞ্জিন কাজ শুরু করে। দমকলের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল পুলিশ, র্যাব, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও, কী কারণে আগুন লেগেছিল তা এখনও জানা যায়নি৷
কাঁচা শাক-সবজির দোকানের পাশাপাশি জুতোর দোকান, সোনার দোকান-সহ বিভিন্ন ধরনের দোকান ছিল এই কৃষি বাজারে। সব মিলিয়ে অন্তত ২ হাজারের বেশি মানুষের জীবিকা নির্ভর করে এই বাজারের উপর। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে দমকল কর্মীদের সন্দেহ, কোনও শর্ট সার্কিটের ঘটনা থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। বাজারের এক নিরাপত্তারক্ষী জানিয়েছেন, দমকল বিভাগ ঘটনাস্থলে আসার আগেই বাজারের একটা বড় অংশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ভিতরে প্লাস্টিকের পণ্য ও মুদিখানার বেশ কয়েকটি দোকান ছিল। সেগুলিতে তেল-সহ বিভিন্ন দাঢ্য বস্তু ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। সেই কারণেই আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এদিকে, বাংলাদেশের দমকল বিভাগের এক বড় কর্তা অভিযোগ করছেন, মহম্মদপুর কৃষি বাজারে অগ্নি সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। অগ্নি নির্বাপণের যে বন্দোবস্ত থাকার কথা, তাও ছিল না। জলেরও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। তার উপর, ফুটপাত ও রাস্তার উপর দোকান থাকায় আগুন নেভানোর কাজে আরও সমস্যায় পড়েছিলেন দমকল বিভাগের কর্তারা। দমকলের ওই কর্তা আরও জানিয়েছেন, এর আগে বারংবার মার্কেট কমিটিকে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তারপরও কাজ হয়নি। তাই, আগুন লাগার খবর পাওয়ার ৯ মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে দমকল কর্মীরা উপস্থিত হলেও, কোনও লাভ হয়নি। দ্রুত গোটা বাজারে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। কাঁচাবাজার, গয়নার দোকান, মুদি, চাল, তৈজসপত্র, হার্ডওয়্যার, প্লাস্টিক, রূপসজ্জার পণ্য, জুতোর দোকান – সবই চলে গিয়েছে আগুনের গ্রাসে। শুধুমাত্র মাছ-মাংসের দোকানগুলি বাজারের এক পাশে থাকায়, সেই দোকানগুলি বেঁচে গিয়েছে।
আর্থিক ক্ষতি বিপুল হলেও, এখনও পর্যন্ত কারও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে নিযুক্ত দু-একজন দমকল কর্মী সামান্য জখম হয়েছেন। তার বাইরে কোনও বড় ধরনের হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। যদি কোনও পণ্য আগুনের গ্রাস থেকে বেঁচে থাকে, সেই আশায় পুড়ে যাওয়া বাজারে, এখন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। মাত্র কয়েক মাস আগে, ইদের ঠিক আগে, ঢাকার বঙ্গ বাজারেও বড় ধরণের আগুন লেগেছিল। বহু দোকানপাট পুড়ে গিয়েছিল। বাজার এলাকাগুলিতে বারবার আগুন লাগায় প্রশ্ন উঠছে, বাজারগুলিতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা উন্নত করতে কেন কঠোর হচ্ছে না বাংলাদেশ সরকার?