ঢাকা: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশিদের নৃশংস র গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার উচিত বলে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে বাংলাদেশ। এবার সেই দাবি ফের তুলল ঢাকা। তাদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান যে বর্বরতা ও গণহত্যা চালিয়েছিল, অবিলম্বে তার দায় স্বীকার করে বাংলাদেশের কাছে সরকারিভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। তবেই বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের উন্নতি হতে পারে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষ্যে উদযাপনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে কলম্বোয় গিয়েছিলেন বাংলাদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। শনিবার সেখানেই পাক বিদেশ প্রতিমন্ত্রী হিনা রব্বানি খানের সঙ্গে তাঁর এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের বিষয়ে রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মোমেন বলেছেন, “বাংলাদেশ চায় পাকিস্তান ১৯৭১ সালে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর চালানো নৃশংসতার জন্য সরকারিভাবে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাক।”
মোমেন জানিয়েছেন তিনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে বলেছেন যে, “আপনাদেরকে প্রথমে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। যদি প্রথমে এটি (প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া) করা হয়, তাহলে আমি আপনাদের হয়ে যুক্তি দিতে পারি। তা না হলে এটা আমার জন্য খুব কঠিন হবে। আমি তা করতে পারি না। এটা শুদ্ধ ও সহজ কথা। পাকিস্তান, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চায়। কিন্তু, বাংলাদেশ মনে করিয়ে দিয়েছে যে, পাকিস্তানের প্রথম কাজ হল প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।”
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চালু করেছিল পাক সেনাবাহিনী। হাজার হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছিল। বহু মানুষ ভারতে পালিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালের দ্বিতীয় চিন-জাপান যুদ্ধের সময় ইম্পেরিয়াল জাপানিজ় আর্মির সেনাদের হাতে চিনা অসামরিক নাগরিকদের হত্যা ‘নানকিং গণহত্যা’ নামে পরিচিত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যে গণহত্যা হয়েছিল, তা কুখ্যাত নানকিং গণহত্যার থেকেও ভয়াবহ ছিল বলে মনে করা হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বাংলাদেশী মুক্তিবাহিনীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। যার জেরে পরে পাকিস্তান বাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল।
এই বিষয়ে ইসলামাবাদ কখনই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি। শেখ হাসিনার সরকার বহুবার ১৯৭১ সালের নৃশংসতার জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা দাবি করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এর আগে বলেছিলেন, “এই গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের লজ্জা পাওয়া উচিত। পাকিস্তান যদি ক্ষমা চাওয়ার গুরুত্ব বুঝতে না পারে তবে এই ধরনের অন্যায়ের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।”