ঢাকা: এ যেন রয়্যাল বেঙ্গল বাঘের সন্ত্রাসবাদ। ঠিক যেভাবে সন্ত্রাসবাদীরা দখল নেয় কোনও সরকারি কার্যালয়ের, সেভাবেই অন্ততপক্ষে ১৬ ঘণ্টা ধরে বন বিভাগের একটি টহলদার ফাঁড়ি দখল করে রাখল তিনটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। যার জেরে ওই টহরদার ফাঁড়িটিতে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বন বিভাগের পাঁচ কর্মী। শেষ পর্যন্ত বাঘ তিনটি বনের ভিতরে চলে গেলেও, তারা বন বিভাগের ওই কার্যালয়টির কাছাকাছিই কোথাও রয়েছে বলে আশঙ্কা বনকর্মীদের। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি), বাংলাদেশের সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের আওতাধীন শরণখোলা রেঞ্জে। শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত চান্দেশ্বর বন কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছিল বাঘ তিনটি।
বাংলাদেশের বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে চান্দেশ্বর বন কার্যালয় সংলগ্ন এক পুকুর ঘাটে দুটি বাঘ দেখতে পেয়েছিলেন। সাধারণত ওই পুকুরে বাঘেরা জল পান করতে আসে। জল পান করার পর তারা ফের বনের গভীরে ফিরে যায়। কিন্তু, গত শুক্রবার তা ঘটেনি। দুটি বাঘ জলপানের পরও ওই পুকুরটির ধারেই থেকে যায়। ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদনে চান্দেশ্বর ফরেস্ট টহলদার ফাঁড়ির ইনচার্জ ফারুক শেখকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, পুকুর পাড়ে বাঘ দুটিকে দেখে তাঁরা আতঙ্কে ওই কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছলেন। কিন্তু, বাঘ দুটি পুকুর পাড় থেকে সরার নামই নেয়নি। প্রথমে কিছু সময় পুকুর পাড়ে বিশ্রাম করেছিল, তারপর সামান্য ঘুরে এসে রান্নাঘরের পাশে অবস্থান নেয়।
লোকালয়ে বাঘ, সতর্ক থাকতে বনবিভাগের মাইকিং ?
বাগেরহাটের শরণখোলার লোকালয়ে আবার বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গেছে।#tiger #Sundarban #Bangladesh pic.twitter.com/XSZPVSqKbD— Focus Bagerhat (@FocusBagerhat) February 5, 2023
সেই থেকে সারা রাত তারা সেখানেই ছিল। বনকর্মীরা কখনও দেখেন বাঘদুটি পুকুর পাড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে, আবার কখনও রান্নাঘরের পাশে এসে বিশ্রাম নিচ্ছে। রাতে আরও একটি বাঘ তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। সারা রাত বনরক্ষীরা যখনই পুকুর পাড়ে টর্চ লাইটের আলো ফেলেছেন, তিন জোড়া জ্বলজ্বলে চোখ দেখতে পেয়েছেন। শনিবার ভোরেও বাঘ তিনটি পুকুর পাড়ের অদূরে বন কার্যালয়ের কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করছিল। তারপর সকালে কোনও এক সময় সেখান থেকে চলে যায় তারা। তবে, তারা ওই বন কার্যালয়ের আশপাশেই কোথাও আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
বস্তুত, বাঘ তিনটির আচরণ খুবই অস্বাভাবিক বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ বন বিভাগের কর্তারা। এই বিষয়ে শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক সামসুল আরেফিন জানিয়েছেন, সুন্দরবনের মধ্যে বাংলাদেশ বন বিভাগের বেশ কয়েকটি কার্যালয় আছে। কিন্তু, সাধারণত বাঘ এই ধরনের আচরণ করে না। টিন পিটিয়ে শব্দ করেও বাঘগুলিকে চান্দেশ্বর অফিস এলাকা থেকে সরানো যায়নি। কেন তারা এরকম আচরণ করল, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে।