ঢাকা: বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ সফর নমোর। নরেন্দ্র মোদীর সফরে ওপার বাংলা ছিল উৎসবে মশগুল। বিদেশমন্ত্রী আবদুল মোমেন বেশ কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন, “বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রীর আসা মানেই উৎসব।” সেই মতো গোটা বাংলাদেশ সেজে উঠেছে। ঢাকার রাস্তা-গলিতে ভেসে বেড়াচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর উষ্ণতা। ‘বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ’, এই বার্তায় গোটা ঢাকা জুড়ে পোস্টার। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেও ফিরে ফিরে এলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে প্রশংসা করলেন ইন্দিরা গান্ধীরও। তার সঙ্গে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মৈত্রীর বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর ‘এ বারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এ বারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ স্লোগানও শোনা গেল প্রধানমন্ত্রীর মুখে। এল অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রসঙ্গও। অতীতের যুদ্ধ, গরিমা, হিংসা ছাড়াও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বার্তা দিলেন মোদী। কার্যত ভারত ও বাংলাদেশকে উন্নয়নের একই মাত্রায় রেখে লক্ষ্য স্থির করে দিলেন তিনি। মোদী বলেন, “সামনের ২৫ বছরের যাত্রা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের লক্ষ্য ও বাধা একই। সন্ত্রাসবাদের মতো বিপদও আছে। তবে সব অতিক্রম করে ভারত ও বাংলাদেশ একসঙ্গে এগিয়ে যাবে।”
সকাল সাড়ে দশটার প্রধানমন্ত্রী যখন হজরৎ শাহলাল বিমানবন্দরে নামলেন তখন হাসিনার মুখে যে আবেগ ধরা পড়েছিল, তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায় গোটা বাংলাদেশ যেন মুখিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে। বিমানবন্দরে গার্ড অব অনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছে হাসিনা সরকার। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন সাভারে। জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহিদদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন নমো। মাঝে একটু জিরিয়ে নিয়েছিলেন সোনারগাঁও হোটেলে। ঠাসা কর্মসূচির মাঝখানে বাংলাদেশের কলাকুশলীদের সঙ্গেও বার্তা বিনিময় করেছেন মোদী। ঢাকা প্যারেড গ্রাউন্ডে মোদীকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ঢেলে সাজানো হয়েছিল অনুষ্ঠান। প্রথমে কোরান, গীতা, ত্রিপিটক বাইবেল পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘মুজিব চিরন্তন।’ পর্দায় ভেসে ওঠে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মন্তাজ।
মোদীর একাধিক সফর দেখে বিশ্লেষকরা বারবার বলেন, বিদেশে মোদীর বক্তব্যের জনপ্রিয়তা অনেক। এ দিনও তার অন্যথা হল না। মোদীর বক্তব্যের সময় শ্রোতার আসন থেকে বারবার ভেসে এল করতালি। ‘নমস্কার’ দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন মোদী। কখনও হিন্দি, কখনও বাংলা, মৈত্রীর বাঁধনে বারবার ভারত-বাংলাদেশকে জুড়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। শহিদ, ভাষা শহিদ থেকে শুরু করে সব মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানালেন মোদী। আর সেই প্রসঙ্গেই উঠে এল ‘এশিয়ার মুক্তিসূর্য’ ইন্দিরা গান্ধীর অবদানের কথা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে ইন্দিরা গান্ধীর প্রশংসা এল মোদীর মুখ থেকে। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “সব কিছুর পরেও সকলের জন্য আশার আলো ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এটা তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে কোনও শক্তিই বাংলাদেশকে দাস বানিয়ে রাখতে পারবে না।”
এ বছরই ২৬ জানুয়ারি দিল্লির রাজপথে প্য়ারেড করেছিল বাংলাদেশের সেনা। করোনা বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার কথাও বললেন নমো। মোদী বলেন, “করোনা মহামারীতে একযোগে লড়েছে ভারত ও বাংলাদেশ।” প্রসঙ্গত, ভারতের ভ্যাকসিন মৈত্রী কর্মসূচি শুরুই হয়েছিল বাংলাদেশে টিকা পাঠিয়ে। এ দিনও মোদীর বাংলাদেশ সফরে হাসিনার জন্য মারণ ভাইরাসের ১২ লক্ষ বিশল্যকরণী পাঠিয়েছে ভারত। এ ছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতে ওপার বাংলার জন্য ছিল মোদীর একঝাঁক ঘোষণা। সে দেশের ৫০ জন উদ্যোগপতিকে ভারতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তার সঙ্গে ওপার বাংলার ছাত্রযুবদের জন্য সুবর্ণ জয়ন্তী স্কলারশিপের ঘোষণা করেছেন নমো। বাংলাদেশ ও ভারতের মৈত্রীর কথা দিয়ে বক্তব্য শেষ করার আগে মোদী বললেন, “জয় বাংলা।”
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ সফরে মোদী, হাসিনাকে ১২ লক্ষ টিকা উপহার ভারতের