ঢাকা: একে বাংলা নববর্ষ, অন্যদিকে রোজার প্রথম দিন, হইহই করছে ঢাকা। চারদিকে লাল-নীল-সাদা কত রঙের পসরা। না, চিরপরিচিত ঢাকার সেই ছন্দ এ বার নেই। করোনা কাঁটায় যেন শহরের প্রাণশক্তিটাই কেউ কেড়ে নিয়েছে। ধু ধু মরুভূমির মতো যতদূর চোখ যায়, ঢাকায় স্রেফ নিস্তব্ধতা। ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ মেজাজ হারিয়েছে শহর। ঝনঝন রিকশার আওয়াজ নেই, নেই ভিড় রাস্তার কেনাকাটাও। রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড আর মাঝে মাঝে সুর করে বাজছে সাইরেন। ঢাকা যেন ‘মাঝ সমুদ্রের নির্জন দ্বীপ।’
করোনার বাড়তি সংক্রমণ রুখতে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করেছে হাসিনা প্রশাসন। সে কারণেই ঢাকা শহর জুড়ে নিরবতা। গুলিস্তানের গোলার শাহ মাজার রোডে যে কাঠের চৌকিগুলিতে জামাকাপড় বিক্রি করতেন হকাররা, সেই চৌকি একেবারে ফাঁকা। তা তুলে এনে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ। গাড়ির হর্নও রাস্তায় নেই বললেই চলে, মাঝে মাঝে হুইসেল বাজিয়ে পুলিশ জানান দিচ্ছে তাদের অবস্থানের কথা।
কেউ রাস্তায় বেরলেই ঘিরে ধরছে পুলিশ। লকডাউন সর্বাত্মক করার স্বার্থে তাঁর কাছে দেখতে চাওয়া হচ্ছে ‘মুভমেন্ট পাস’। ঢাকার প্রাণ রিকশা। লকডাউনের আওতার বাইরে নন রিকশাচালকরা। তাই ভিড়ে ঠাসা রাস্তার পরিবর্তে রিকশাগুলি এখন গ্যারেজে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বড় শপিং মল, বন্ধ সবই। গত বছর ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। সে বারও লকডাউন হয়েছিল, তবে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড পড়েনি। গত বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই এ বার বেশি সাবধানী প্রশাসন।
আধা সরকারি, সরকারি, বেসরকারি সব অফিস বন্ধ। রাস্তায় চলছে না বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, আকাশে উড়ছে না বিমান, জলেও লঞ্চে বেড়ি পরানো। সাধারণত বছরের দুই ঈদে ঢাকার রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু এহেন নিরবতা যেন বেনজির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আড্ডা নেই, প্রতি ঘরে নববর্ষকে আপন করে নেওয়ার সেই জৌলুসও নেই। ইলিস মাছের চড়া দাম নেই, ইলিশ কেনার চাহিদাও নেই। ঢাকার রাস্তায় পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে কেউ কেউ বেরচ্ছেন, কিন্তু এহেন শহর দেখে বাড়ি ফেরা ছাড়া অন্য কোনও কাজ নেই। এক রিকশাওয়ালা ভেবেছিলেন, এক রাউন্ড মেরে আসবেন। কিন্তু মনে পড়ল, পুলিশ এসে বলে গিয়েছে রিকশা বের করতে না। তাই গ্যারেজে রিকশা, আর বাড়িতে তিনি। এ ভাবেই কেটে যাচ্ছে লকডাউনে মোড়া বছরের পয়লা।
আরও পড়ুন: ‘প্রাণঘাতী’ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ডেনমার্কে চিরতরে বাতিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা