ঢাকা: সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশের বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ফেসবুকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সম্প্রতি তাদের কাজের একটি কোলাজ ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে। তা থেকেই এই সমালোচনার সূত্রপাত। এর পাশাপাশি সংগঠনের কাজের স্বচ্ছতা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যানন্দের পাশে দাঁড়ালেন বাংলাদেশের প্রবাসী লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ফেসবুক পোস্ট করে বিদ্যানন্দের সমর্থনের পাশাপাশি নিজের দেশকেও তোপ দাগলেন লেখিকা। এবার তা নিয়ে নতুন করে শোরগোল পড়েছে।
ঢাকার বঙ্গবাজারে আগ্নিকাণ্ডে ব্যবসায়ীদের সাহায্য় করতে এগিয়ে আসে বাংলাদেশের বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ। তবে ফেসবুকের একটি কোলাজ ছবি পোস্ট ঘিরে তাদের কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। তাদের অতীতের অন্যান্য কাজ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। শুরু হয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামতও। এই সময়েই বিদ্যানন্দকে নিয়ে একটি পোস্ট করেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এই পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছেন, বিদ্যানন্দকে কিছু সম্পত্তি দিতে চান তিনি। নিজের শান্তিনগরের অ্যাপার্টমেন্টটিও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশকে নিয়েও নানা কথা উঠে এসেছে তাঁর পোস্টে।
তসলিমা নাসরিনের পোস্টের বক্তব্য:
তাঁর পোস্টের শুরুতেই বাংলাদেশের সমালোচনা করে তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশ নামক পোড়া দেশে ভাল কাজের দাম নেই।” তিনি লিখেছেন, “সত্যিকার দেশপ্রেমের মূল্য নেই। সৎ এবং নিঃস্বার্থ মানুষের জায়গা নেই। ও দেশে সে কারণে আমার জায়গা হয়নি। আমার সততা আর সভ্যতাকে ও দেশ চরম অপমান করেছে, চরম অসম্মান করেছে, সত্য বলেছি বলে আমাকে অন্যায়ভাবে অত্যাচার করেছে। ওই দেশে সত্য ভূলুণ্ঠিত, ওই দেশে মিথ্যের জয়জয়কার। ওই দেশের চরিত্র আমি খুব ভাল করে জানি, ওই দেশকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। ওই দেশের মূর্খ ধর্মান্ধরা বিদ্যানন্দ নামের একটি সংস্থার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে, যেহেতু বিদ্যানন্দ ভাল কাজ করছে, যেহেতু বিদ্যানন্দ নিঃস্বার্থ এবং সৎ। বিদ্যানন্দ কী কী ভাল কাজ করেছে আমার জানার দরকার নেই। যখন অপশক্তি সরব হয় কারও বিরুদ্ধে, আমি বুঝি সে মানুষটি নিশ্চয়ই মানুষের মঙ্গলের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে। স্বার্থহীনতা ঠিক কী জিনিস এবং মানুষ কেন স্বার্থহীন হয় তা বুঝতে স্বার্থান্ধ লোকের চিরকাল অসুবিধে হয়।
ভাবছি আমার শান্তিনগরের অ্যাপার্টমেন্টটি আমি বিদ্যানন্দকে দান করে দেব। ওই ফ্ল্যাটে বসে আমি এক সময় মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করার জন্য, সুস্থ সুন্দর অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের জন্য, নারীর সমানাধিকারের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লেখালেখি করেছি। ওই ফ্ল্যাটে বসে বিদ্যানন্দের কর্মীরা মানুষের দারিদ্র ঘোচানোর জন্য, মানুষকে শিক্ষিত এবং সভ্য করার জন্য কাজ করবে। স্বপ্নবান মানুষদের জন্য এটুকু কেন, এর চেয়েও অনেক বেশি করতে পারি। সৎ এবং নিঃস্বার্থ মানুষরাই আমার উত্তরসূরি, তাদেরই আমি আত্মীয় বলে মানি।”
তসলিমা নাসরিনের এই ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। হঠাৎ করে তার বাংলাদেশ নিয়ে এই ধরনের ফেসবুক পোস্ট বেশ সাড়া ফেলেছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ৪ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবাজারে আগুন লাগে। হাজার হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায় এই অগ্নিকাণ্ডে। ইদের আগে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে এই বিদ্য়ানন্দ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। পুড়ে যাওয়া কাপড় কোনওভাবে নতুন করে ব্যবহার উপযোগী করে তুলে অভিনেতা–অভিনেত্রীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের জনপ্রিয় ব্যক্তিদের কাছে তা বিক্রি করা হয়। শিশুদের পোশাক, গয়নাসহ নানা পণ্য বানিয়ে তা বিক্রি করে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জানিয়েছেন, এরকমই এক উদ্যোক্তার বানানো কিছু গয়নার ছবি দেখে গয়না বানানোর চেষ্টা করা হয়। সেই কাজের ছবি কোলাজ করে পোস্ট করার সময় হয়ে যায় বড় ভুল। নিজেদের হাতের কাজের পরিবর্তে ওই উদ্যোক্তার বানানোর গয়নার ছবি পোস্ট হয়ে যায়। এই নিয়েই শুরু হয় সমালোচনা। তবে সংগঠনের তরফে এর জন্য ক্ষমাও চাওয়া হয়। কিন্তু তারপরও সমালোচনায় ইতি পড়েনি। কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এই মামলায় এবার বিদ্য়ানন্দের পাশে দাঁড়ালেন তসলিমা নাসরিন।