ঢাকা: বছর ঘুরলেই বাংলাদেশের নির্বাচন। ৭ জানুয়ারি ভোট রয়েছে পদ্মাপারে। আর এবার ওপার বাংলার ভোট ময়দানে নামছে তৃণমূলও। এই প্রথমবার বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তারা। একেবারে আঁট-ঘাট বেঁধে আসরে নেমেছে। নিজেদের সর্বশক্তি লাগিয়ে দিয়েছে ভোটের মাঠে। ৩০০ আসনে ভোট। তার মধ্যে প্রথমবার বাংলাদেশের ভোট ময়দানে নেমেই ২৩০ আসনে নিজেদের মনোনয়ন জমা করে ফেলেছে তৃণমূল। যদিও শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র ভেরিফিকেশন ও প্রত্যাহার পর্বের পর, ১৪২টি আসনে তারা লড়াই করছে। বাংলাদেশের ভোট-যুদ্ধে প্রথমবার নেমে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে তৃণমূল? তা নিয়েও চর্চা চলছে পদ্মাপারের রাজনীতিতে।
পদ্মাপার থেকে একাধিক রাজনৈতিক স্লোগানের আমদানি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। যেমন, ‘জয় বাংলা’ কিংবা ‘খেলা হবে’ স্লোগান পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির বাতাবরণে প্রবেশের অনেক আগে থেকেই রয়েছে বাংলাদেশে। আর এবার বাংলাদেশের ভোটেও তৃণমূল। নাহ, এই তৃণমূলের সঙ্গে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। এরা হল তৃণমূল বিএনপি। খালেদা জিয়াদের বিএনপির থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেরিয়ে আসা এক বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। প্রাক্তন বিএনপি নেতা তথা বাংলাদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী নাজমুল হুদা এই দল গঠন করেছিলেন। ২০১৫ সালে। দলবিরোধী কাজের অভিযোগে নাজমুলকে বিএনপি বহিষ্কার করেছিল দল থেকে। এরপরই তিনি তৃণমূল বিএনপি তৈরি করেন। খালেদা জিয়ার দল ছাড়ার পর এটি অবশ্য তাঁর প্রথম দল ছিল না। বিএনপি ছেড়ে প্রথমে তিনি তৈরি করেছিলেন বিএনএফ। পরে নিজের তৈরি দল থেকেই বহিষ্কৃত হয়েছিলেন নাজমুল। এরপর তৈরি করেন তৃণমূল বিএনপি।
ভারতীয় রাজনীতিতে এককালে কংগ্রেস ভেঙে তৈরি হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে খালেদা জিয়াদের বিএনপি ভেঙে বেরিয়ে এসে তৈরি হয়েছে তৃণমূল বিএনপি।
২০১৫ সালে তৈরি হলেও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে স্বীকৃতি পেতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছিল নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপিকে। দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চলে। সংগঠন তৈরি হওয়ার পরও নির্বাচন কমিশনে রেজিস্টার্ড না হওয়ায় ২০১৮ সালে তারা ভোটে লড়তে পারেনি। অবশেষে আদালতের নির্দেশের পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃতি পায় তৃণমূল বিএনপি। লোগো হয় সোনালি আঁশ। নির্বাচন কমিশনের খাতায় নাম তুলতেই ভোটের জন্য় প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছিল তৃণমূল বিএনপি।
ঢাকা ট্রিবিউনে নভেম্বরের শেষের দিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খান্দেকর দাবি করেছেন, ‘তৃণমূল বিএনপিই হবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের তৃণমূল কংগ্রেস।’ তিনি এও বলেছিলেন, “তৃণমূল বিএনপি-র লক্ষ্য ভবিষ্যতে সরকার গঠন করা। যদি তা নাও হয়, তাহলে প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠব আমরা। আমরা সেই মতো পরিকল্পনা নিচ্ছি এবং আমরা দেশে পরিবর্তন আনতে চাই। বাংলাদেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।”
পদ্মাপারের ভোটের ফলাফল কী হতে চলেছে, কারা তখতে আসতে চলেছে, তা অনেকের কাছেই স্পষ্ট। শেখ হাসিনাদের আওয়ামী লিগকে এতদিন ধরে যারা ভোটের মাঠে বেগ দিয়ে এসেছে, সেই বিএনপি এবার ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, কোনও আসনেই বিএনপির প্রার্থী নেই। জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লিগকে বাদ দিলে জাতীয় পার্টিই (জাপা) একমাত্র দল, যাদের সংগঠন কিছুটা হলেও মজবুত। তবে দেশের সর্বত্র সমান সাংগঠনিক শক্তি নেই জাপার।
বাংলাদেশের রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের মতে, যেহেতু বিএনপি ভোটের ময়দানে নেই, তাই বিরোধী দলের আসনে এবারও জাপার উঠে আসার সম্ভাবনাই প্রবল। এখানে অদ্ভুত একটি সমীকরণ হল, যে দলগুলি এবার ভোটে লড়ছে, তারা প্রত্যেকেই আপাতভাবে আওয়ামী লিগের ‘বন্ধু’ দল। বিরোধী দল জাপাও হাসিনাদের বন্ধু দল বলেই পরিচিত বাংলাদেশে। কিন্তু তৃণমূল বিএনপি এবার ভোটের মাঠে নেমে পড়ায়, বিরোধী দলের তকমা হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে জাপা। পদ্মাপারের সংবাদপত্র নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনই দাবি করা হচ্ছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপা সংশয় করছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তৃণমূল বিএনপিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লিগ।
ওপার বাংলার ভোট যত এগিয়ে আসছে, তত চর্চা শুরু হয়েছে শেখ হাসিনার দলের সঙ্গে তৃণমূল বিএনপির গোপন আঁতাত নিয়ে। যদিও সম্প্রতি ‘সমকাল’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন শামসের মবিন চৌধুরী দাবি করেছেন, আওয়ামী লিগের সঙ্গে তাদের দলের কোনও গোপন আঁতাত কিংবা অ্যারেঞ্জমেন্ট কিছুই নেই। প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে নির্বাচনের একাধিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হলেও, আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলেই দাবি করেছেন তৃণমূল বিএনপির নেতা। এমনকী বাংলাদেশের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার এও জানিয়েছেন, বেশ কিছু জায়গায় তাঁদের প্রার্থীকে প্রচারে গিয়ে হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে।