ঢাকা: ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। গঠিত হয়েছে শান্তিতে নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে এক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বাংলাদেশে কেউ বলছেন এটা তাদের তৃতীয় স্বাধীনতা। কেউ বলছেন, গণতন্ত্র ফিরেছে। কিন্তু, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সকল পদক্ষেপ করছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে এটা কী সন্ত্রাসবাদীদের স্বাধীনতা, দুবৃত্তদের গণতন্ত্র? এতদিন, একের পর এক জামাত নেতাকে মুক্তি দেওয়া চলছিল। এবার সরাসরি মুক্তি দেওয়া হল ভারত বিরোধী কুখ্যাত এক জঙ্গি নেতাকে। গত সোমবার (২৬ অগস্ট), আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিমুদ্দিন রহমানিকে প্যারোলে মুক্তি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এই আনসারুল্লাহ গোষ্ঠীর সরাসরি যোগ রয়েছে আল-কায়েদা গোষ্ঠীর সঙ্গে। আর এর ফলে, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগ অনেকটাই বাড়ল।
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজীব হায়দার নামে এক বাংলাদেশি ব্লগারকে ঢাকায় তাঁর বাড়ির সামনেই কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ওই হত্যার দায়ে ওই বছরের অগস্টে গ্রেফতার করা হয় রহমানিকে। তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইনে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগও রয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয় রহমানির আনসারুল্লা বাংলা টিম বা এবিটি-কে। এরপর, এই জঙ্গি গোষ্ঠী নাম বদলে হয় আনসার আল-ইসলাম। ২০১৭ সালে আনসার আল-ইসলামকেও নিষিদ্ধ করেছিল হাসিনা সরকার। গত সোমবার, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় রহমানিকে। শুধু মুক্তি দেওয়া নয়, তাঁকে রীতিমতো এসকর্ট করে নিয়ে যায় বাংলাদেশ সেনা। নায়কের সম্মান জানানো হয়। মুক্তি পেয়েই তাঁকে হুডখোলা গাড়ি থেকে সমর্থকদের উদ্দেশে ভাষণ দিতেও দেখা যায়।
বাংলাদেশি সরকারের এই পদক্ষেপে কপালের ভাঁজ বাড়তে চলেছে নয়া দিল্লির। কেন? আনসারুল্লাহ বাংলা টিম দীর্ঘদিন ধরেই ভারতে তাদের সন্ত্রাসবাদের জাল ছড়াতে চাইছে। অতীতে ভারতে তাদের বহু কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চলতি বছরের মে মাসেও গুয়াহাটি রেলস্টেশন থেকে এবিটি-র দুই জঙ্গিকে আটক করেছিল অসম পুলিশ। এবিটি-র সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে ভারতে নিষিদ্ধ, ‘আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট’ গোষ্ঠীর। উত্তর-পূর্ব ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালাতে লস্কর-ই-তৈবা-সহ পাকিস্তানি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির অংশীদার হয়েছে। এমনকি, ২০২২-এ লস্করের সাহায্যে ভারতে একটি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিও স্থাপন করেছিল আনরুল্লাহ। ওই বছরই তাদের প্রায় ১০০ সদস্য ত্রিপুরায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল। কাজেই, তাদের নেতার মুক্তি নিয়ে ভারতকে চিন্তায় থাকতে হবে বৈকি।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ভারতের। নিজ দেশের নিরাপত্তার পাশাপাশি, প্রতিবেশি ভারতের নিরাপত্তাকেও অগ্রাধিকার দিতেন হাসিনা। তাঁর আমলে, বাংলাদেশে ভারত বিরোধী শক্তিগুলির প্রান্তিক হয়ে পড়েছিল। হাসিনার পতনের পরই, আশঙ্কা করা হয়েছিল বাংলাদেশে এই শক্তিগুলি এখন প্রান্ত থেকে কেন্দ্রে চলে আসবে। বাস্তবেও তাই ঘটছে। হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে শুধু রহমানি নয়, বেশ কয়েকজন চরমপন্থী নেতা জেল থেকে পালিয়েছে। ৬ অগস্ট মেঘালয় সীমান্তবর্তী শেরপুরের এক কারাগারে হামলা চালায় সশস্ত্র জনতা। প্রায় ৫০০ বন্দি পালিয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের, ‘ইন্ডিয়ান অপারেশনস হেড’ ইকরামুল হক ওরফে আবু তালহা-ও। আর এবার বাইরে এলেন খোদ রহমানি। যা ভারতের জন্য সবথেকে চিন্তার বলে মনে করা হচ্ছে।