Bangladesh: ফিরে এসেছে ভারতীয়রা, রাস্তা-রেল নিয়ে অথই জলে বাংলাদেশ

Bangladesh: রেলপথ হোক কি মহাসড়ক, বাংলাদেশে নির্মাণ প্রকল্পগুলির দায়িত্বে ছিল ভারতীয় সংস্থাগুলিই। হাসিনার পতনের পর, নিরাপত্তার খাতিরে এই সকল ভারতীয় সংস্থার কর্মী-কর্তারা সকলেই ফিরে এসেছেন ভারতে। তাতেই বিশ বাঁও জলে বাংলাদেশ। সব প্রকল্পই পড়ে রয়েছে আধা-খেচড়াভাবে।

Bangladesh: ফিরে এসেছে ভারতীয়রা, রাস্তা-রেল নিয়ে অথই জলে বাংলাদেশ
থমকে বাংলাদেশের রাস্তা রেলপথ তৈরির প্রকল্প Image Credit source: Twitter
Follow Us:
| Updated on: Sep 13, 2024 | 2:50 PM

ঢাকা: জায়গায় জায়গায় বড় বড় খানাখন্দ। বাস-গাড়ি চলাচল করতে পদে পদে বাধা পাচ্ছে। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে লম্বা যানজট। কোথাও ওভারপাসের পিলার তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। মহাসড়কে এই বেহাল দশার কারণে ওই রাস্তা ব্যবহার না করে শহরের মধ্য দিয়েই যাতায়াত করছে ভারী ভারী যানবাহন। যার ফলে শহরের ভিতরের রাস্তায় ভয়ঙ্কর যানজটের কারণে নিত্যদিন ব্যাপক দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত রাস্তাকে চার লেনের জাতীয় মহাসড়ক করার কাজ চলছিল। গত ৫ অগস্ট গত শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, নিরাপত্তার খাতিরে সেই দেশ থেকে ভারতে চলে এসেছেন ভারতীয় কর্মী-কর্তারা। আর তাতেই বিশ বাঁও জলে বাংলাদেশের এই সড়ক প্রকল্পের কাজ। কারণ, এই রাস্তা তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল এক ভারতীয় ঠিকাদার সংস্থাকেই। শুধু এই প্রকল্পটিই নয়, একইভাবে থমকে গিয়েছে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্পের কাজও।

২০১৭ সালে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রাস্তাকে চার লেনের জাতীয় মহাসড়ক করার প্রকল্পকে অনুমোদন দিয়েছিল শেখ হাসিনা সরকার। প্রায় ৫১ কিলোমিটারের লম্বা এই মহাসড়ক নির্মাণের খরচ ধরা হয়েছিল ৫,৭৯১ কোটি টাকা। ভারতের ঋণ দিয়েছিল এই প্রকল্পের জন্য। তিন দফায় এই হাইওয়ে তৈরি হচ্ছিল। তিনটি দফারই বরাত পেয়েছিল ভারতীয় ঠিকাদারি সংস্থা, ‘এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’। প্রথম দুই দফার কাজ শেষ হলেও, তৃতীয় দফার কাজ এখনও শুরুই করা যায়নি। ২০১৭ সালে নির্মাণকাজ শুরু হলেও, জমি অধিগ্রহণ, করোনা মহামারি ও অর্থনৈতিক মন্দার কারমে বারবার এই প্রকল্পের কাজ পিছিয়েছে। এর মধ্যে তিনবার এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আগামী বছরের জুনে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। এই অবস্থায় ভারতীয় শ্রমিক ও কর্তারা দেশে ফিরে যাওয়ায়, এই প্রকল্পর কাজ আরও পিছিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের প্রোজেক্ট ম্যানেজার মহম্মদ শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, গত মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তার খাতিরে এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রায় তিনশ কর্মী ও আধিকারিক ভারতে চলে এসেছেন। ফলে, বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই প্রকল্পের কাজ। মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে সেতু ও কালভার্ট অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে প্রচুর নির্মাণসামগ্রী ও দামি দামি যন্ত্রাংশ। শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, ভারতীয় হাইকমিশন থেকে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচারের কর্মী-কর্তাদের বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। হাইকমিশন থেকে সবুজ সংকেত পেলেই তাদের কর্মীরা বাংলাদেশে এসে কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। তবে, এসবই বেসরকারিভাবে জানানো হয়েছে। কবে তারা আসতে পারবে, তার কোনও সুনির্দিষ্ট তারিখ পাওয়া কেউ বলতে পারছে না। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, প্রকল্পের কাজ আরও পিছিয়ে যাবে এবং খরচও আরও বাড়বে।

একইভাবে অনিশ্চয়তা কাটছে না আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্প নিয়েও। প্রায় ২৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করছে আরেক ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, ‘টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরুর পর প্রোজেক্ট ম্যানেজার-সহ অন্তত ৭ জন ইঞ্জিনিয়ার ভারতে ফিরে এসেছেন। ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রকল্পটির কাজ। রেলপথ পাতার কাজ অবশ্য শেষ হয়ে গিয়েছিল গত বছরের ১ নভেম্বরই। বেশ কয়েক দফায় ট্রায়াল রানও হয়েছিল। তারপর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথটির উদ্বোধন করেছিলেন। তবে, সেই সময়ও কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন ভবন, প্ল্যাটফর্ম এবং লিঙ্ক রোড তৈরির কাজ বাকি ছিল। এখনও সেই কাজ পুরোপুরি শেষ করা যায়নি। কবে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়াররা বাংলাদেশে যাবেন, কবে ফের এই রেল প্রকল্পের কাজ ফের শুরু হবে, সেই সম্পর্কে কারও কোনও ধারণাও নেই।