বার্লিন: ৮ মার্চ ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। মহিলাদের জন্য উৎসর্গ করা এই দিনটির অন্যতম লক্ষ্য নারী-পুরুষে বিভেদ কমিয়ে আনা। আর এই লক্ষ্য়েই এক বড় সিদ্ধান্ত নিল জার্মানির রাজধানী বার্লিন। শহরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন থেকে যে কোনও পাবলিক সুইমিং পুলে মহিলাদের বক্ষ অনাবৃত করে সাঁতার কাটতে আর বাধা নেই। একই সঙ্গে অর্ধনগ্ন হয়ে মহিলারা ‘সানবাথ’ বা সূর্যস্নানও করতে পারবেন। সম্প্রতি, বার্লিনের এক পাবলিক সুইমিং পুলে অনাবৃত স্তন প্রদর্শনের দায়ে এক মহিলাকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। অথচ, সেখানে বহু পুরুষ খালি গায়ে ছিলেন। ওই মহিলা এই ঘটনার বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ করেছিলেন। তারপরই এই রায় দিয়েছে বার্লিন শহর কর্তৃপক্ষ। জার্মান রাজধানীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের বিচারে অভিযোগকারী মহিলা লিঙ্গ-বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। তাই এখন থেকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে ঊর্ধাঙ্গে কোনও পোশাক ছাড়াই সাঁতারের পুল উপভোগ করতে পারবেন।
বার্লিনের পাবলিক সুইমিং পুলগুলি দেখভাল করে বার্লাইনার বেডারবেট্রিবি। তারা জানিয়েছে, ওই অভিযোগকারী একা নন, গত ডিসেম্বর মাসে আরও এক মহিলা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে শহরের একটি ইনডোর পুলে বক্ষ আবৃত করতে বাধ্য করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, জার্মান সংস্কৃতিতে নগ্নতা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং উপযুক্ত জীবনধারা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বস্তুত, ফ্রাইকোপারকুলতুর (Freikörperkultur) বা প্রকৃতিবাদ, অর্থাৎ প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতার সংস্কৃতি জার্মানিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় জীবনধারা। প্রকৃতিবাদীরা সাধারণত সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় থাকেন। বার্লিন কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন।
জার্মান প্রকৃতিবাদীদের এক সংগঠন বলেছে, “এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এতদিন সাঁতারের পুলে পুরুষরা ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত রাখতে পারলেও, মহিলাদের সেই সুযোগ ছিল না। এই সিদ্ধান্ত পুরুষ, মহিলা, তৃতীয় লিঙ্গ – সকল বার্লিনবাসীর জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করল। আইনিভাবে বিষয়টি নিশ্চিত হল। এখন দেখতে হবে যে, এই বিধানটি যাতে ধারাবাহিকভাবে প্রয়োগ করা হয় এবং আর কোন বহিষ্কার বা নিষেধাজ্ঞা জারি করা না হয়।”
ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত করে সাঁতার কাটার নিয়ম পরিবর্তন ক্ষেত্রে, বার্লিন জার্মানির প্রথম শহর নয়। ২০২২ সালে নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার প্রদেশের সিজেন শহর এবং লোয়ার স্যাক্সনির গটিংজেন শহরে সুইমিং পুলে টপলেস সাঁতারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। লোয়ার স্যাক্সনির রাজধানী হ্যানোভার শহরের নিয়ম, “শহরের স্নান করার জায়গাগুলিতে শুধুমাত্র প্রধান যৌনাঙ্গ আবৃত রাখলেই হবে।” ইউরোপের আরও অনেক দেশেই ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত বা সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় থাকার জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারিত আছে। ২০১৭ সালে সুইজারল্যান্ড গোটা দেশেই ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত করে সাঁতার কাটার অনুমতি দিয়েছে।