কিয়েভ: তাঁর যৌন আবেদনে একসময় ঘায়েল হয়েছে বহু পুরুষ। তবে, সেটাই তাঁর একমাত্র অস্ত্র ছিল না। তাঁর স্নাইপার রাইফেলের নিশানাও ছিল সমান তীক্ষ্ণ। এত অস্ত্রে সজ্জিত হয়েও, মনে প্রাণে তিনি চাইতেন শান্তি। তাঁর ধর্ম ছিল মানবতা। আর, সেই কারণেই সারা বিশ্ব জুড়ে মানব কল্যাণের বিভিন্ন কাজে যুক্ত ছিলেন থালিতো দো ভ্যালে। এর আগে, ইরাকে আইএসআইএস-এর বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এই ৩৯ বছর বয়সী ব্রাজিলীয় মডেল। ইউক্রেনে রুশ হামলার পরও বাড়িতে বসে থাকতে পারেননি। ছুটে গিয়েছিলেন ইউক্রেনে। ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। কিন্তু, ডেইলি মেইল-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সপ্তাহে ইউক্রেনের খারকিভ শহরে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র কেড়ে নিয়েছে তাঁর প্রাণ।
এক সময় ব্রাজিলের অন্যতম জনপ্রিয় মডেল ছিলেন থালিতো দো ভ্যালে। পরে অবশ্য মডেলিং ছেড়ে বিভিন্ন মানবতাবাদী কাজে যুক্ত হয়েছিলেন। সপ্তাহ তিন-চারেক আগে, তিনি ডগলাস বুরিগো নামে ব্রাজিল সেনার এক প্রাক্তন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে, ব্রাজিল থেকে ইউক্রেনে এসে পৌঁছেছিলেন। ইউটিউব এবং টিকটকে তাঁদের ইউক্রেন যাত্রার ভিডিয়োও পোস্ট করছিলেন। এরপর, ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের সঙ্গে তাঁরাও রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে সামিল হয়েছিলেন। বিশেষ করে থালিতো তাঁর স্নাইপার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিচ্ছিলেন। কিন্তু, গত ২০ জুন খারকিভ শহরে যুদ্ধে তাঁদের দুজনেরই মৃত্যু হয়েছে। ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সোমবারই থালিটো এবং ডগলাস খারকিভে এসেছিলেন। শহরের একটি বাঙ্কারে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে সেই বাঙ্কারটিই ধ্বংস হয়ে যায়।
অত্যন্ত দক্ষ স্নাইপার হিসেবে পরিচিত ছিলেন থালিতো। স্নাইপারের প্রশিক্ষণ তিনি পেয়েছিলেন ইরাকে। ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়ার আগেও, তাঁর যুদ্ধের অভিজ্ঞতা ছিল। ইরাকে ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কুর্দি যোদ্ধাদের হয়ে লড়াই করেছিলেন এই ব্রাজিলীয় মডেল। কুর্দিস্তান এলাকার সশস্ত্র যোদ্ধা বাহিনী ‘পেশমারগাস’-এ যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেই বাহিনীর কমান্ডাররাই থালিতোকে স্নাইপারের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। অতি দ্রুত তাঁর স্নাইপার চালনায় সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে, সেই পড়াশোনাকে কাজে লাগিয়ে পশু উদ্ধারের কাজে বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।
ইউক্রেন যুদ্ধে তাঁর অভিজ্ঞতা একটি ইউটিউব চ্যানেলে নথিভুক্ত করছিলেন থালিতো। একজন লেখকের সঙ্গেও সেই সব অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছিলেন। এর থেকে একটি বই প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। ব্রাজিল থেকে, থালিতোর ভাই তাঁর দিদিকে ‘নায়ক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, থালিতো বরাবর মানবতাবাদী যে কোনও অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। অসহায় মানুষের প্রাণ রক্ষা করতে এগিয়ে যেতে দু’বার ভাবতেন না। খারকিভে পৌঁছনোর পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে থালিতোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তবে, তার আগেও ইউক্রেন থেকে বাড়িতে ফোন করতে ভয় দ্বিধা করতেন থালিতো, এমনটাই দাবি করেছেন তাঁর ভাই। থালিতো না কি তাঁর আত্মীয়দের বলেছিলেন, রুশ সেনাবাহিনী ফোনে আড়ি পাতছে।