ম্যানিলা: কোভিড-১৯ মহামারির আগমনের পর থেকেই নাকি বহু সংখ্যায় বেড়েছে ‘ভূতের ভর হওয়ার’ ঘটনা। আর তার জন্যই এবার শুধুমাত্র ‘এক্সরসিজ়ম’ অর্থাৎ, ভূত তাড়ানোর জন্যই একটি পৃথক কেন্দ্র তৈরি করল ক্যাথলিক চার্চ। সেখানে যাজকদের ভূত-প্রেত তাড়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ‘ডেইলি মেইল’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী এই কেন্দ্রটির নাম ‘সেন্ট মাইকেল সেন্টার ফর স্পিরিচুয়াল লিবারেশন অ্যান্ড এক্সরসিজম’। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী ম্যানিলায় এই কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে। সেই দেশে তো বটেই, এশিয়াতেই এটাই প্রথম ক্যাথলিক চার্চের ভূত তাড়ানোর এবং তার প্রশিক্ষণ দেওয়ার কেন্দ্র।
‘ম্যানিলা অফিস অব এক্সরসিজমের’ ডিরেক্টর তথা প্রধান ওঝা, ফাদার হোসে ফ্রান্সিসকো সিকিয়ার দাবি, মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে তাঁদের কাছে প্রতিদিন অন্তত ১০টি করে ভৌতিক ভর হওয়ার ঘটনা রিপোর্ট করা হচ্ছে। আসলে, মহামারির ফলে মানসিক, অনুভুতিগত, আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আর এই অবস্থাটা ‘ভূতের ভর হওয়া’ এবং ‘ভৌতিক হস্তক্ষেপের’ জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তবে ‘ম্যানিলা অফিস অব এক্সরসিজম’ জানিয়েছে, এই কেন্দ্রটি তৈরি করার পরিকল্পনা অন্তত সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে করছিল তারা। মহামারির আবির্ভাবে ‘ব্যাখ্যাতীত ঘটনার’ সংখ্যা বহুগুণে বেড়ে যাওয়ায়, অবশেষে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে। গত মাসেই যাত্রা শুরু করেছে এই কেন্দ্র।
‘ডেইলি মেইলের’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভূত তাড়ানোর কেন্দ্রটিতে রোগীদের কাউন্সেলিং, ভূত তাড়ানো এবং তাদের রোগীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পৃথক পৃথক কক্ষ থাকবে। এছাড়াও, কেন্দ্রে একটি চ্যাপেলও থাকবে। শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, সারা বিশ্ব থেকেই ক্যাথলিক যাজকরা এই কেন্দ্রে ভূত তাড়ানোর প্রশিক্ষণ নিতে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ফাদার সিকিয়া বলেছেন, ‘শয়তানের দাসত্বে থাকা ব্যক্তিরাই সবথেকে খারাপ অবস্থায় থাকে এবং সাধারণত তাদের আমরা উপেক্ষা করি। এই ব্যক্তিদেরই সাহায্য করবে এই কেন্দ্র’। পাশাপাশি ‘ফিলিপাইন অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যাথলিক এক্সরসিস্টস’ বা ‘পেস’-এর সদর দফতরও এই কেন্দ্রেই থাকছে। সেই দেশের প্রধান ক্যাথলিক সংগঠন, ফিলিপাইনস ক্যাথলিক বিশপস অ্যাসোসিয়েশন-এর আওতাধীন হল এই ‘পেস’ সংস্থা। প্রসঙ্গত, ব্রাজিল এবং মেক্সিকোর পরে, ফিলিপাইন্সেই বিশ্বের সবথেকে বেশি ক্যাথলিক ধর্মের মানুষ থাকেন।
ফাদার সিকিয়ার মতে, বিশ্বে যতগুলি ভূত-প্রেত ভর করার ঘটনা ঘটে, তার মাত্র ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভর করতে দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অশুভ আত্মারা যে ব্যক্তির দেহে ভর করে, তাঁকে ‘শারীরিকভাবে হয়রানি’ করে। তাঁর দাবি, গত চার-পাঁচ বছরে অশুভ জাদু বিদ্যার চর্চা বেড়েছে। সেই সঙ্গে ক্রমে আরও অস্বাস্থ্যকর হয়েছে লাইফস্টাইল বা জীবনযাপনের ধরণ। ফলে ভূত-প্রেত ভর করার ঘটনা এমনিতেই বাড়ছিল। তবে, কোভিড-১৯ মহামারিতে ‘তীব্র বৃদ্ধি’ ঘটেছে।
ক্যাথলিক চার্চ অবশ্য সকলকে ভূত তাড়ানোর অনুমতি দেয় না। কোনও বিশপকে ভূত তাড়ানোর অনুমতি পাওয়ার আগে কঠোর প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেই সঙ্গে, বহু বিষয়ে অনুমোদন নিতে হয়। তারপরই, গির্জা থেকে বিশপদের ভূত-প্রেত তাড়ানোর অনুমতি পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে প্রথমবার ভূত তাড়ানোর প্রশিক্ষণের একটি কোর্স চালু করা হয়েছিল।