Gaza: ‘যন্ত্রণায় কাঁদছে শিশুরা, ব্যথা কমানোর ওষুধও নেই’, ভয়ঙ্কর ছবি গাজার
Gaza: খাবারের গাড়ি এলাকায় পৌঁছলে মানুষ যখন একটু খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছেন, সেই লাইন লক্ষ্য করে বোমা-মিসাইল ছুড়ছে ইজরায়েল। ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই দড়ি টানাটানিতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গাজার শিশুদের। গাজা সরকারের মিডিয়া বিভাগের অভিযোগ, দুধ, জল-সহ শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার গাজাতে ঢুকতে দিচ্ছে না ইজরায়েল। একে 'যুদ্ধাপরাধ' বলেও মন্তব্য করেছে গাজার সরকারি মিডিয়া।

গাজা: গাজা ভূখণ্ডে আক্রমণ আরও তীব্র করেছে ইজরায়েল, অভিযোগ প্যালেস্টাইনের। ইজরায়েলি হামলায় কয়েকশো পরিবার গাজায় তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন। আর অন্যদিকে, যাঁরা এখনও পালাননি, তাঁরা বোমার আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে লাইন দিয়েছেন। ভিড় উপচে পড়ছে স্থানীয় হাসপাতালে। ইজরায়েলি বায়ুসেনার হামলায় গাজায় এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছে প্যালেস্টাইন। একদিকে, ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যখন সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার জন্য চাপ বাড়াচ্ছেন, তখন তাঁর সেনার হামলায় শুধু রবিবারই ৬৮ জন প্যালেস্তিনীয়র মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে খবর। গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দাবি মোতাবেক, আজ পর্যন্ত ইজরায়েলি হানায় গাজায় ৫৬,৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত কমবেশি দেড় লক্ষ মানুষ।
প্যালেস্টাইনের অভিযোগ, খাবারের গাড়ি এলাকায় পৌঁছলে মানুষ যখন একটু খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছেন, সেই লাইন লক্ষ্য করে বোমা-মিসাইল ছুড়ছে ইজরায়েল। উত্তর গাজায় খান ইউনিসে খাবারের লাইনে ইজরায়েলের হামলায় ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সূত্রের খবর। খারাপ অবস্থা গাজার হাসপাতালগুলিরও। ব্রিটেনের পেডিয়াট্রিক নার্স হ্যানা গ্রেস জানিয়েছেন, হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড নেই, নেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর্মীও। রোগীদের মেঝেতে শুইয়ে রাখতে হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘সবচেয়ে কষ্টকর হচ্ছে ছোটদের চিকিৎসা করা। বোমার আঘাতে পুড়ে যাওয়া শিশুদের চিকিৎসার জন্য কোনও পেনকিলার নেই। ওদের গায়ে হাত দিলেই জ্বালা-যন্ত্রণায় ওরা চিৎকার করে কাঁদছে। আমরা অসহায়। আমাদের কাছে একটাও ব্যথা কমানোর ওষুধ নেই।’
গাজা এখন কার্যত মৃত্যপুরী। মানুষ ইতিউতি ভাঙা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খাবার খুঁজছেন। কিন্তু পড়ে থাকা বোমা আচমকা ফেটে তাঁদের মৃত্যু ঘটছে। রাফাতে খাবার বিতরণের সেন্টারের সামনে ইজরায়েলি বোমা হামলায় মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। রাষ্ট্রসংঘ জানিয়েছে, গাজাতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ায় সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। সংঘর্ষবিরতির দাবি করে রাষ্ট্রসংঘ এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছে, অসুস্থ প্রবীণ নাগরিকদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনও বন্দোবস্ত এখন আর গাজাতে নেই। অসুস্থ হওয়া মানে বসে বসে মৃত্যুর অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই তাঁদের।

ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি গাজায়
এই পরিস্থিতিতে জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে, ইজরায়েল যদি গাজা থেকে সমস্ত সেনা সরিয়ে নিয়ে যায়, তাহলে তারাও যে ৫০ জন ইজরায়েলি বন্দিকে আটকে রেখেছে তাদের মুক্তি দিতে রাজি। যদিও এই দাবি উড়িয়ে ইজরায়েল পাল্টা জানিয়েছে, হামাস এখন আলোচনা বা কোনও শর্ত দেওয়ার জায়গাতে নেই। এই যুদ্ধ তখনই থামবে, যখন হামাস জঙ্গিরা নিঃশর্তে অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হবে।

মৃতদেহের সারি
ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই দড়ি টানাটানিতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গাজার শিশুদের। না খেতে পেয়ে ৬৬ জন শিশুর মৃত্যু আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিসংখ্যানে উঠে এলেও আদতে সংখ্যাটা কয়েকশো গুণ বেশি বলছেন প্যালেস্টিনীয়রা। ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী ৫,১১৯ জন শিশু খেতে না পেয়ে অপুষ্টিতে ভুগছে। গাজা সরকারের মিডিয়া বিভাগের অভিযোগ, দুধ, জল-সহ শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার গাজাতে ঢুকতে দিচ্ছে না ইজরায়েল। একে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলেও মন্তব্য করেছে গাজার সরকারি মিডিয়া। এবছরের শুরু থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রতিদিন অন্তত ১১২ জন করে শিশু গড়ে অপুষ্টিতে ভুগছে, মোট সংখ্যাটা ১৬, ৭৩৬ জনেরও বেশি।

