বেজিং: চিনকে নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়ল বাকি বিশ্বের। সম্প্রতি, এক যুগান্তকারী নতুন অস্ত্র সামনে আনলেন চিনা বিজ্ঞানীরা। এই প্রথম বিশ্ব দেখল স্টার্লিং ইঞ্জিন-চালিত হাই-পাওয়ার মাইক্রোওয়েভ অস্ত্র! আগামি দিনে, এই অস্ত্রই যুদ্ধক্ষেত্রে কামাল দেখাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই অস্ত্র থেকে কোনও গোলাগুলি ছুটে যায় না। বদলে, একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ছুটে যায় একঝাঁক ইলেকট্রন। চলতি মাসের শুরুর দিকেই চিনা বিজ্ঞানীরা চারটি কমপ্যাক্ট এবং দক্ষ স্টার্লিং ক্লোজ-সাইকেল হিট ইঞ্জিন-চালিত একটি হাই-পাওয়ার মাইক্রোওয়েভ অস্ত্র তৈরির দাবি করেছেন। চিনা সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিনের এই নতুন অস্ত্র তাপ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে। এর মাধ্যমে তৈরি করা হয় ইলেকট্রনের তরঙ্গ, যা শত্রুপক্ষের ড্রোন, বিমান ও স্যাটেলাইটগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, একটি সুপারকন্ডাক্টিং কয়েল চার টেসলা শক্তির একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। ড্রোন, সামরিক বিমান এবং এমনকি স্যাটেলাইটকেও ধ্বংস করে দিতে পারবে এই শক্তিশালী এইচপিএম তরঙ্গ। এইচপিএম অস্ত্র তৈরির জন্য বিভিন্ন দেশই গত কয়েক বছর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, স্টার্লিং ইঞ্জিন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে এইচপিএম অস্ত্র তৈরির দাবি প্রথম জানাল চিনই। এই অস্ত্রে যে চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়, তার তীব্রতা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ৬৮,০০০ গুণ। ইউরোপের লার্জ হেড্রন কোলাইডার-এর চৌম্বক ক্ষেত্রের শক্তির অর্ধেক। এই যন্ত্রকে ইলেকট্রন অ্যাক্সিলারেটরও বলা হয়। ডিএনএর মতো দেখতে দুটি সর্পিল টিউব থেকে একটি নির্দিষ্ট দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে তীব্র গতিতে ইলেকট্রনের স্রোত পাঠায় এই যন্ত্র।
এই অস্ত্র বহন করাও অত্যন্ত সহজ। একটি বুকশেল্ফেই রেখে দেওয়ার মতো ছোট যন্ত্রটি। এটি সহজেই কোনও বাড়ির ছাদে বা ট্রাকে মাউন্ট করা যায়। ২০২৩ সালের মার্চে চিনা বিজ্ঞানীরা একটি কমপ্যাক্ট পাওয়ার উৎস উদ্ভাবন করেছেন, যা এই অস্ত্রের আকার উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট করে দিয়েছে। বর্তমানে অন্যান্য অস্ত্রতৈরি করতে যা খরচ পড়ে, তার তুলনায় এই অস্ত্র তৈরির খরচ অনেক কম। চিনের দাবি, বর্তমানে যে অস্ত্রগুলি রয়েছে, তাতে যে শক্তি খরচ হয়, তার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ ব্যবহার হয় মাইক্রোওয়েভ অস্ত্রে। চার ঘন্টা ধরে একটানা চালানো যাবে এই অস্ত্র। প্রতি সেকেন্ডে দশটি স্পন্দনে ১০ গিগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে এই অস্ত্র। প্লেন, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং স্যাটেলাইটে যে ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলি থাকে, এই অস্ত্র থেকে তৈরি বিদ্যুৎ, সেগুলিকে নষ্ট করে দেয়।
ঘরের পাশে এই ভয়ঙ্কর অস্ত্র আবিষ্কার, স্বাভাবিকভাবেই ভারতের চন্তা বাড়াল। তবে, ভারতও বসে নেই। ২০২৩-র জুলাই মাসেই হাই পাওয়ার মাইক্রোওয়েভ (এইচপিএম) অস্ত্র তৈরির প্রয়োজন বলে জানিয়েছিল ভারতীয় সেনা। এক সেটাও ছিল চিনা অস্ত্রের মোকাবিলাতেই এই নয়া প্রযুক্তির অস্ত্র তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সেনা। চীনের এক সংস্থা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ৩,০৫১ ড্রোন নিয়ে তৈরি একটি ড্রোনের ঝাঁকের প্রদর্শনী করে বিশ্ব রেকর্ড করেছিল। ২০২১-এর মার্চে সেই রেকর্ড ভেঙেছিল ৩,২৮১ টি ড্রোন দিয়ে। এই ধরনের অস্ত্রে, এই হাজার হাজার ড্রোনকে নিয়ন্ত্রণ করে একটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ফলে, এতগুলি ড্রোন একই সমন্বয়ে চলে, একযোগে হামলা করতে পারে। এই ড্রোনের ঝাঁকের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতেই মাইক্রোওয়েভ অস্ত্র তৈরি প্রয়োজন বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে জানিয়েছিল সেনা। সেই বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, তবে এখনও সাফল্য আসেনি।