বেজিং: ৩৪ বছর পর নিজের পরিবারকে খুঁজে পেয়েছিলেন। চোখের জলে ভেসেছিলেন সকলে। পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার সেই আনন্দ অবশ্য বেশি দিন স্থায়ী হল না। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন বছর সাঁইত্রিশের ইউ বাওবাও। আর পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পিছনে অর্থ নিয়ে টানাপোড়েনের কথা তুলে ধরলেন তিনি।
বছর পঁয়ত্রিশ আগে বাওবাওকে অপহরণ করেছিল পাচারকারী। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২ বছর। চিনের সিচুয়ান প্রদেশে দাদু-ঠাকুমার বাড়ি থেকে তাঁকে অপহরণ করা হয়। এরপর হেনান প্রদেশে এক ধনী পরিবারে বাওবাওকে বিক্রি করে দেয় পাচারকারীরা। বাওবাও জানিয়েছেন, সেখানে তাঁর উপর অত্যাচার করা হত। ওই পরিবার বাওবাওকে জানিয়েছিল, পাঁচ বছর বয়সে তাঁকে দত্তক নিয়েছে তারা। এগারো বছর বয়সে বাওবাওকে অন্য পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু, ওই বাড়ি ছেড়ে পালান তিনি। তারপর যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়াতে থাকেন। উনিশ বছর বয়সে বাওবাও সাংহাই ও বেজিংয়ে আসেন কাজের খোঁজে। ডেলিভারি বয় হিসেবে কাজ শুরু করেন।
কাজের ফাঁকেই নিজের আসল পরিবারকে খোঁজার চেষ্টা করতে থাকেন। একদিন পুলিশের কাছ থেকে বাওবাও খবর পান, তাঁর ডিএনএ-র সঙ্গে মিল পাওয়া গিয়েছে এক পরিবারের। আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন তিনি। সেইসময় বাওবাও জানিয়েছিলেন, মায়ের কোলে আরামের নিদ্রা নেবেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে পরিবারের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে আত্মহারা হয়ে যান সবাই। বাবা-মা ছাড়াও বাওবাওয়ের দুই ভাই রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের কাহিনি সবাইকে জানান বাওবাও। সেইসময় নেটিজেনরা তাঁকে পরামর্শ দেন, অনলাইনে ই-কমার্স লাইভ স্ট্রিমিং শুরু করতে। আর তা শুরু করার পর আয় অনেকটাই বাড়ে বাওবাওয়ের।
সেখান থেকে সমস্যার শুরু। বাওবাও জানান, অর্থ নিয়ে তাঁর উপর চাপ বাড়াতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। যদিও আয়ের ৬০ শতাংশ তিনি পরিবারকে দেন। তারপরও আরও চাপ দিতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। এমনকি, পরিবারে স্বাগত জানিয়ে তাঁর উপর তাঁরা দয়া করেছেন বলে দুই ভাই জানান। বাওবাওয়ের মনে হতে থাকে, তাঁর মা দুই ভাইয়ের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছেন। এবং তাঁকে শুধু অর্থ উপার্জনের মেশিন মনে করছেন। তাঁর এক ভাই তাঁকে মারধরের হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ। তারপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানান বাওবাও।
নিজের পরবর্তী লক্ষ্যও ঠিক করে ফেলেছেন ইউ বাওবাও। কী সেই লক্ষ্য? এখন থেকে টাকা জমাতে চান। আর তাঁকে যারা পাচার করেছিল, সেই পাচারকারীদের খুঁজে বের করতে সেই টাকা খরচ করতে চান। তাদের আইনের কাঠগড়ায় তোলাই এখন তাঁর লক্ষ্য।