ইসলামাবাদ: ইমরান খানের ১০ বছরের কারাদণ্ড! সাইফার মামলায় পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী তথা পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিল পাকিস্তানের আদালত। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি), পাকিস্তানের এক বিশেষ অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট আদালত এই রায় দিল। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে এই মামলার শুনানি হয়। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট অবশ্য এই ইমরান ও শাহ মাহমুদের বিচার বাতিল এবং অকার্যকর ঘোষণা করেছিল। তারপরই অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ২০২৩-এর আওতায় এই বিশেষ আদালত গঠন করা হয়েছিল। তারাই আজ সাইফার মামলায় ইমরান এবং শাহ মাহমুদকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিল।
প্রসঙ্গত, মাস খানেক আগেই এই মামলায় ইমরান এবং শাহ মাহমুদ – দুজনকেই ১০ লক্ষ টাকার বন্ডে জামিন দিয়েছিল পাক সুপ্রিমন কোর্ট। এরপর, এই মামলায় আইনি ত্রুটির উল্লেখ করে, ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ আদালতের কার্যক্রম স্থখগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তাদের জেলে পাঠানোর রায় দিল বিশেষ আদালত। ইমরান এবং শাহ মাহমুদ দুজনেই নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, সাইফার মামলার পিছনে কিছু “শক্তিশালী লোকজন” রয়েছে। তারাই তাঁদের এই মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে। বিচার প্রক্রিয়াকে “তামাশা” বলেছিলেন ইমরান। তিনি অভিযোগ করেন, বিচারক এবং আবেদনকারী – উভয় পক্ষই সরকারের। কাজেই এই ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের কোনও আশা নেই।
কিন্তু কী এই সাইফার মামলা? তার যোগে আসা গোপন কূটনৈতিক তথ্যকে বলা হয় সাইফার। ইমরান খানের বিরুদ্ধে একটি সাইফার ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছে। ২০২২ সালের মার্চে, ওয়াশিংটনের পাকিস্তান দূতাবাস থেকে পাঠানো হয়েছিল ওই সাইফারটি। কিন্তু, ইমরান খান সেই কূটনৈতিক তথ্য হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে অভিযোগ। ইমরান খান এবং মাহমুদ খুরেশি, দুজনেই এই অভিযোগকে পাকিস্তানে পিটিআই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেন। তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠার পরই, ইমরান এবং তাঁর সহকারীর বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘন করার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
২০২২-এর এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের হেরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে, ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেড়শোরও বেশি মামলা হয়েছে। এই নিয়ে দ্বিতীয় মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন ইমরান খান। ২০২৩-এর ৫ অগস্ট তোষাখানা মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল পাক আদালত। তাঁকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ইসলামাবাদ হাইকোর্ট অবশ্য প্রাথমিকভাবে তাঁর সাজা স্থগিত করেছিল। তবে, পরে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ইমরানের সাজা স্থগিত করার আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছিল। এরপরই ইমরান খানকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছিল পাক নির্বাচন কমিশন। এবার ১০ বছরের জেল হওয়ায়, তাতে সিলমোহর পড়ল বলা যায়।