Congo: ‘মানুষের মাংস দিয়ে বলল রান্না কর, তারপর হল খেতেও’, ধর্ষণে শেষ হল না অপহৃত মহিলার দুঃস্বপ্ন

অপহরণের পর বারবার ধর্ষণ আর তারপর মানুষের মাংস রান্না করে খেতে বলা হয়েছিল। বুধবার (২৯ জুন), রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সামনে কঙ্গোর এক মহিলার উপর বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জঙ্গিদের অত্যাচারের এক ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছে সেই দেশের এক মানবাধিকার সংগঠন।

Congo: 'মানুষের মাংস দিয়ে বলল রান্না কর, তারপর হল খেতেও', ধর্ষণে শেষ হল না অপহৃত মহিলার দুঃস্বপ্ন
কোডেকো জঙ্গিদের খোঁজে কঙ্গোর সেনাবাহিনী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 30, 2022 | 6:42 PM

রাষ্ট্রসংঘ: অপহরণের পর বারবার তাঁকে ধর্ষণ করেছিল বিদ্রোহীদের একাধিক সদস্য। যৌন হেনস্থা তো ছিল সবসময়ের ঘটনা। এরপর, তাঁর চোখের সামনেই আরেক বন্দির গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল। আর, তারপর তার পেট কেটে অন্ত্র এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অংশ টেনে বের করে এনে নির্যাতিতা মহিলা বলা হয়েছিল রান্না করতে। রান্নার পর সেই মানুষের মাংস খেতে বাধ্য করা হয়েছিল তাঁকে। বুধবার (২৯ জুন), রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সামনে কঙ্গোর এক মহিলার উপর বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জঙ্গিদের অত্যাচারের এক ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছে সেই দেশের এক মানবাধিকার সংগঠন।

দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কঙ্গোতে সরকার এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। ২০ বছরেরও বেশি হয়ে গেল সেই দেশে মোতায়েন রয়েছে রাষ্ট্রসংঘে শান্তিরক্ষা বাহিনী। ২০১২-১৩ সালের সরকারের বিরোধী এই বিদ্রোহ চরম আকার ধারণ করেছিল। তারপর থেকে নিয়মিত সংঘর্ষে গত এক দশকে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিটেছাড়া হয়েছেন। গত মে মাসের শেষ দিক থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী বনাম সেই দেশের সেনাবাহিনীর এই লড়াই আরও জোরদার হয়েছে। সূত্রের খবর, দেশের একটা বড় অংশের দখল এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির হাতে।

এই অবস্থায়, বুধবার কঙ্গোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে রিপোর্ট নেওয়ার জন্য বৈঠক করে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। সেই বৈঠকে কঙ্গোর মহিলা অধিকার রক্ষা গোষ্ঠী, ‘ফিমেল সলিডারিটি ফর ইন্টিগ্রেটেড পিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ বা সোফেপাডি (SOFEPADI)-এর পক্ষ থেকে বিদ্রোহী জঙ্গিদের হাতে কঙ্গোর ওই মহিলার চরম নির্যাতনের কাহিনি তুলে ধরা হয়। ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদকে মহিলা অধিকার রক্ষা গোষ্ঠীটির সভানেত্রী জুলিয়েন লুসেঞ্জ জানান, ওই মহিলাকে দুই বার দুটি পৃথক বিদ্রোহী গোষ্ঠী অপহরণ করেছিল। দুই ক্ষেত্রেই তাঁকে বারবার ধর্ষণ করা হয়েছিল এবং তাঁকে মানুষের মাংস রান্না করতে এবং খেতে বাধ্য করা হয়েছিল।

কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের জমি ও সম্পদের দখল নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত কোডেকো গোষ্ঠী

লুসেঞ্জ বলেছেন, ‘ওই মহিলাকে তাঁর অপহৃত পরিবারের অন্য এক সদস্যের জন্য মুক্তিপণ দিতে গিয়েছিলেন। সেই সময় তাঁকে কোডেকো জঙ্গিরা অপহরণ করেছিল। এরপর বারবার ধর্ষণ এবং শ্লীলতাহানির শিকার হতে হয় তাঁকে।’ তবে সেখানেই ভয়াবহতার শেষ হয়নি। ওই মহিলা সোফেপাডি-কে বলেছেন, জঙ্গিরা এরপর তাঁর সামনেই এক বন্দির গলা কেটে হত্যা করেছিল। হত্যার পর, তাঁর অন্ত্র ও অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গ টেনে বের করে মহিলাকে সেগুলি রান্না করতে বলা হয়েছিল। রান্নার জন্য বিদ্রোহী জঙ্গিরা তাঁকে দুটি পাত্রে করে জল এনে দিয়েছিল। তিনি ওই জলে সহবন্দির দেহাংশ সিদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এরপর ওই সিদ্ধ মানুষের মাংস ওই মহিলা এবং সমস্ত বন্দিদের খাওয়ানো হয়েছিল।

লুসেঞ্জ জানান, এভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পর কোডেকো গোষ্ঠী ওই মহিলাকে ছেড়ে দিয়েছিল। প্রসঙ্গত, কোডেকো হল কঙ্গোর বেশ কয়েকটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট। দীর্ঘদিন ধরে এই জোট কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের জমি ও সম্পদের দখল নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। এই অঞ্চলটি অত্যন্ত খনিজ সমৃদ্ধ। কোডেকো গোষ্ঠী ছেড়ে দিলেও ওই মহিলার দুঃস্বপ্নের সমাপ্তকি ঘটেনি। তিনি যখন কোডেকো জঙ্গিদের ডেরা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন, সেই সময় অন্য একটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী ফের তাঁকে অপহরণ করেছিল। সেই গোষ্ঠীর সদস্যরাও তাঁকে বারবার ধর্ষণ করে। নির্যাতিতা মহিলার বয়ান অনুযায়ী, সেখানেও তাঁকে ফের মানুষের মাংস রান্না করে খেতে বলা হয়েছিল। লুসেঞ্জ অবশ্য এই দ্বিতীয় সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নাম জানাননি। তাঁর অভিযোগ সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কোডেকের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।