ওয়াশিংটন: ডেল্টার ঢেউ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে আমেরিকা, তারই মাঝে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শোনালেন আরও ভয়ের কথা। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ফের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে(Delta Variant)-র কারণেই করোনা সংক্রমণ শীর্ষে উঠতে পারে। আগামী কয়েক বছরও সাধারণ মানুষের জীবনের অঙ্গ হয়েই থাকবে এই মারণ সংক্রমণ (COVID-19), এমনটাই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
দেশের অর্ধেক মানুষের টিকাকরণের প্রথম ভাগ পার হতেই বিধিনিষেধ শিথিল করেছিল বাইডেন প্রশাসন। বলা হয়েছিল, টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাস্ক না পরলেও চলবে। তবে সেই ভুল ধারণা ভেঙে যায় কয়েকদিনেই। আমেরিকায় জুলাই মাসের শুরু থেকেই উর্ধ্বমুখী হতে থাকে সংক্রমণ। গত এক সপ্তাহেই সেখানে প্রায় দুই লক্ষের কাছাকাছি মানুষ সংক্রামিত হয়েছেন।
দৈনিক মৃত্যুহারও যথেষ্ট উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। প্রতিদিনই গড়ে ১৮০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে এক লক্ষেরও বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, ভারতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের যে রূপ দেখা গিয়েছিল, আমেরিকাতেও একইভাবে দাপট দেখাচ্ছে অতি সংক্রামক এই ভ্যারিয়েন্ট। ইউরোপের পশ্চিমভাগেও একাধিক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের খোঁজ মিলছে নতুন করে।
শীত চলে আসায় ও নতুন ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তির জেরে পঞ্চম ঢেউয়ের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না গবেষকরা। কানাডার এক ভাইরোলজিস্ট জানান, গত মাসের তুলনায় পরিস্থিতির উন্নতি হলেও চতুর্থ ঢেউ যে শেষ হয়ে গিয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। শীতকালে ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠায় ফের একবার সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে সংক্রমণ রুখতে আপাতত টিকাকরণকেই হাতিয়ার বলে মনে করা হচ্ছে। আমেরিকায় ১২ উর্ধ্ব জনসংখ্যার ৬৩.১ শতাংশ জনগণই ইতিমধ্যে করোনা টিকা পেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে বিপুল পরিমাণ টিকা থাকা সত্ত্বেও পর্তুগাল (৮১ শতাংশ জনগণই টিকাপ্রাপ্ত) ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (৭৯ শতাংশ টিকাপ্রাপ্ত)-র পিছিয়ে রয়েছে আমেরিকা।
গত সপ্তাহেই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, টিকাকরণের গতি বাড়াতে একাধিক নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হবে। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো অতি সাধারণ স্বাস্থ্যবিধিগুলি ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন।
শিশুদের টিকাকরণের পাশাপাশি কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের বুস্টার ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে একাধিক দেশে। তবে বিশেষজ্ঞরা আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, যারা সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত, তাদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
তবে নতুন করে মাথা ব্যাথ্য়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে লং কোভিড। করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরও দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে রোগীর নানা উপসর্গ বা শারীরিক জটিলতা থেকেই যাচ্ছে। নতুন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যারা করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, তারাও লং কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ‘বন্ধু’ তালিবদের দেড় কোটি ডলার সাহায্য পাঠাল বেজিং