World War III: খাঁ খাঁ করছে দোকান, ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে সব খাবার-জল, হঠাৎ কোন বিপদের আতঙ্ক ছড়াল?
World War III: পুতিনের এই সিদ্ধান্ত সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে নাটো দেশগুলি। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা নিয়ে প্যামফ্লেট বিলি করাও শুরু হয়েছে কিছু কিছু দেশে।
তবে কি আবার ফিরতে চলেছে ১৯৪৫-এর হিরোশিমা-নাগাসাকির সেই ভয়াবহ চিত্র? তেমন সম্ভাবনাই দেখছে ইউরোপ। যে কোনও সময় শুরু হতে পারে পরমাণু যুদ্ধ, তাই প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপ। আমেরিকার দেওয়া মিসাইল ইউক্রেনকে রাশিয়ার উপরে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে বাইডেন সরকার। তারপরেই গর্জে উঠেছিল রাশিয়া, ‘বাইডেন প্রশাসন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে চাইছে’ এই অভিযোগ তুলেই সরব হয়েছিল পুতিন সরকার। আমেরিকার মিসাইল ব্যবহার হলে, তার যোগ্য জবাব দেবে রাশিয়া, সেটাও জানিয়েছিলেন পুতিন। কিন্তু সেই সব কিছুকে উপেক্ষা করেই নিষেধাজ্ঞা উঠতে রাশিয়ার উপরে ৬টি দূরপাল্লার মিসাইল ব্যবহার করে আঘাত হেনেছে জেলেনেস্কি প্রশাসন। এরপরেই মঙ্গলবার ভ্লাদিমির পুতিন পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কমিয়েছে। পুতিনের এই সিদ্ধান্ত সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে নাটো দেশগুলি। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা নিয়ে প্যামফ্লেট বিলি করাও শুরু হয়েছে কিছু কিছু দেশে।
‘দ্য মিরর অফ ইউকে’ অনুসারে, পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কায় সুইডেন দেশবাসীদের কী ভাবে কোথায় ‘আশ্রয়’ নিতে হবে সেই বিষয়ে সতর্ক বার্তা প্রচারের জন্য একটি প্যানফ্লেট বিলি করা শুরু করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মাত্র পাঁচবার এই প্যামফ্লেট জারি করা হয়েছিল। সেই প্যামফ্লেট প্রত্যেক সুইডিশ পরিবারে পাঠানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আলু, কপির মতো কাঁচা সবজি, ডিম প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুত করে রাখতে বলা হয়েছে।
নরওয়ে জরুরীভাবে প্যামফ্লেট বিলি করে জনগণকে সর্বাত্মক যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে বলেছে, এমনকি অন্তত এক সপ্তাহের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সামগ্রী বাড়িতে মজুত করে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
সুইডেন-নরওয়ে ছাড়াও ন্যাটো দেশগুলি তাঁদের জনগণকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ডেনমার্ক সরকার দেশবসীকে ইমেল করে জানিয়েছে বাড়িতে শুকনো খাবার, জল, ওষুধ সব মজুৎ করে রাখতে, যাতে জরুরী অবস্থায় অন্তত ৩ দিন কোনও অসুবিধা না হয়। এমনকি পরমাণু যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
ফিনল্যান্ডও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিতে “ঘটনা এবং সংকটের জন্য প্রস্তুতি” বিষয়ক তাদের অনলাইন ব্রোশিওর আপডেট করেছে। রাশিয়ার সঙ্গে অনেকটা অংশ জুড়ে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে ফিনল্যান্ড। আবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণেও ভয়ে আছে ফিনল্যান্ড। শীতের মরশুম, এই সময়ে মাইনাস ২০ডিগ্রি সেলসিয়াসে কী ভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় প্রশাসন। তবু আয়োডিন ট্যাবলেট, খাবার, পোষ্যের খাবার পাওয়া সাপ্লাই ব্যাক আপ রাখতে বলা হয়েছে দেশবাসীকে।
প্রসঙ্গত, আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো মিলিটারি গ্রুপে গত বছর যোগদান করে ফিনল্যান্ড। সুইডেন রাশিয়া-ইউক্রেনের ক্রমবর্ধমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই বছরের মার্চ মাসে ন্যাটোতে যোগদান করেন।
বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনকে ‘আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম’ ব্যবহার করে রাশিয়ার উপর আঘাতের ব্যপারে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এই বিশেষ মিসাইল ৩০০ কিলোমিটার রেঞ্জ পর্যন্ত গভীর ক্ষতি করতে সক্ষম।
প্রসঙ্গত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ১০০০ দিন অতিক্রান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সামনেই আসতেই পুতিনও জানিয়ে দেন, ন্যাটো দেশগুলির মধ্যে যে কোনও একটি দেশ যদি রাশিয়াকে আক্রমণ করে, তবে তা ন্যাটোর অধীন সব দেশের যৌথ আক্রমণ বলেই ধরে নেওয়া হবে। কিন্তু এই সবকে উপেক্ষা করেই আমেরিকার ৬টি মিসাইল রাশিয়ার উপরে ব্যবহার করেছে জেলেনেস্কি। এমনকি তিনি এও বলেন যে “হামলা শব্দ দিয়ে হয় না, বলেও করা হয় না। এবার মিসাইল কথা বলবে।”
‘বাইডেন প্রশাসন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে চাইছে’ বলে এক্স মাধ্যমে সরকারকে দুষেছেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিজেরাও রণ সাজে সজ্জিত হতে শুরু করেছে ন্যাটো দেশগুলি। আর ভয়ে শঙ্কায় দিন গুনছে দেশবাসী।