কলোম্বো: আর্থিক সঙ্কটের মুখে তীব্র প্রতিবাদ, সাধারণ মানুষের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ উত্তাল হয়ে উঠেছিল শ্রীলঙ্কা। শাসকদলের একাধিক নেতার বাড়িতে হামলা হয়েছিল, জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল মন্ত্রী-সাংসদদের বাড়ি। বিক্ষোভের আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিলেন শাসকদলের এক সাংসদ। এই অবস্থায় দেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষ (Mahinda Rajapaksa)। ইতিমধ্যেই দ্বীপরাষ্ট্রের নয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রনিল বিক্রমসিংঘে (Ranil Wickremesinghe) শপথ নিয়েছেন এবং আর্থিক সঙ্কটের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তিনি যে প্রস্তুত সেই কথাও জানিয়েছেন। ইস্তফা দেওয়ার পর থেকে রাজাপক্ষকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি, তবে সূত্র মারফত জানা গিয়েছিল গণরোষ থেকে বাঁচতেই গা-ঢাকা দিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। এবার মাহিন্দা রাজাপক্ষের সঙ্কট আরও বাড়ল বলেই জানা গিয়েছে। শ্রীলঙ্কার একটি আদালত শুক্রবার রাজাপক্ষকে যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছে। শুধু রাজাপক্ষই নয়, তাঁর সঙ্গে আরও ৬ জনকে গ্রেফতার করার জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সরকার বিরোধী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ওপর আক্রমণের প্ররোচনা দেওয়ার জন্য এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কলোম্বো ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (Colombo Magistrate Court) কাছে এই মর্মে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির কাছে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য আন্দোলকারীদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছিল। রাজাপক্ষের সমর্থকরাই এই আক্রমণ করেছিল বলে জানা গিয়েছিল। ডেইলি শ্রীলঙ্কা মিররে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছিল, বিক্ষোভকারীরা রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছিলেন, সেই কারণেই তাদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছিল। কলোম্বো ফোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট থিলিনা গামাগে ১৭ মে কলম্বো চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদনটি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অ্যাটর্নি সেনাকা পেরেরা নামের এক ব্যক্তি চিফ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এই অভিযোগ জানিয়েছিলেন বলেই জানা গিয়েছে।
ওই পিটিশনে মাহিন্দা রাজাপক্ষ, সাংসদ জনস্টন ফার্নান্দো, সঞ্জিওয়া এদিরিমান্নে, সনৎ নিশানথা এবং মোরাতুওয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান সামান লাল ফার্নান্দো, সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা দেশবন্ধু টেন্নাকুন এবং চন্দনা বিক্রমেরত্নেকে গ্রেফতারের আবেদন জানানো হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে এই প্রথম এই পরিমাণ আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা। জ্বালানি সঙ্কট, লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সাধারণ মানুষে দুর্দশা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। নয়া প্রধানমন্ত্রী এই পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এটাই এখন দেখার।