কাবুল: এক সপ্তাহ আগেই দেশের শাসনভার চলে গিয়েছে তালিবানের হাতে। আফগান মহিলাদের শিক্ষা ও সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই মেয়েদের আবাসিক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা রেজিস্ট্রার সহ যাবতীয় নথি পুড়িয়ে ফেললেন। তালিবানিদের কাছ থেকে পড়ুয়াদের পরিচিতি গোপন করতেই এই পদক্ষেপ করেছেন বলে জানান তিনি।
১৯৯৬ সালেও যখন আফগানিস্তানের দখল নিয়েছিল তালিবানরা, সেই সময়ে জারি করা হয়েছিল শরিয়া আইন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল মেয়েদের স্কুল যাওয়া। দু’দশক পার করে ফের একবার সেই তালিবানি শাসনই শুরু হচ্ছে। তালিবানের শীর্ষ নেতৃত্বরা জানিয়েছেন, শরিয়া আইন মেনেই মহিলাদের শিক্ষা ও চাকরি করার স্বাধীনতা দেওয়া হবে। কিন্তু বাড়ি বাড়ি তালিবানের হানা, নাবালিকাদের বিয়ে বা যৌনদাসী হওয়ার প্রস্তাবেই প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবের মধ্যে বিস্তর ফারাক সামনে এসেছে।
এই পরিস্থিতিতে তালিবানের হাতে যদি স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের নথি হাতে চলে যায়, তবে তাদের প্রাণ সঙ্কটে পড়তে পারে, এই আশঙ্কাতেই আফগানিস্তানে মেয়েদের আবাসিক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শাবানা বাসিজ রাশিখ পড়ুয়াদের সমস্ত নথি পুড়িয়ে ফেললেন। টুইটারে নিজেই কাগজপত্র পুড়িয়ে দেওয়ার ভিডিয়ো পোস্ট করে তিনি লেখেন, “আফগানিস্তানে মেয়েদের আবাসিক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে আমি পড়ুয়াদের সমস্ত রেকর্ড পুড়িয়ে দিচ্ছি। পড়ুয়াদের অস্তিত্ব মুছে ফেলতে নয়, বরং তাদের পরিবারের সুরক্ষার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার সমস্ত ছাত্রীর অভিভাবকরা নিশ্চিন্ত থাকুন, আমরা সমস্ত নথি পুড়িয়ে দিয়েছি এবং আপনাদের পাশেই রয়েছি।”
Nearly 20 years later, as the founder of the only all-girls boarding school in Afghanistan, I’m burning my students’ records not to erase them, but to protect them and their families.
2/6 pic.twitter.com/JErbZCSPuC— Shabana Basij-Rasikh (@sbasijrasikh) August 20, 2021
অতীতে তালিবানি শাসনের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, সেই সময়ও ছাত্রীদের অস্তিত্ব মুছে ফেলতে নথি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০০২ সালে তালিবানের পতনের পর আফগান মহিলাদের সামনে এক নতুন সুযোগ এসেছিল। পাবলিক স্কুল, যেখানে ছেলে-মেয়ে একসঙ্গে পড়ার সুযোগ পায়, সেই প্লেসমেন্ট পরীক্ষাতেও বসার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
২০ বছর বাদে তালিবানরা যখন ফের আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে এবং শরিয়া আইন জারি করেছে, সেখানে নারী অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে বলেই তিনি মনে করেন। তিনি ও বাকি সহকর্মীরা সুরক্ষিত থাকলেও বাকি পড়ুয়ারা কতটা সুরক্ষিত থাকবে, তা নিয়ে সন্দিহান বাসিজ। সেই কারণেই তিনি সমস্ত নথি পুড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে নারীশিক্ষার জন্য যে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন তিনি, তা থামাবেন না বলেই জানিয়েছেন। টুইটে তিনি বলেন, “আফগান মেয়েদের শিক্ষার মাধ্যমে সাহায্য করার যে সংকল্প নিয়েছিলেন, সেই আগুন নেভেনি, বরং আরও শক্তিশালী ও উজ্জ্বল হয়েছে। সঠিক সময় আসবেই, তবে বর্তমানে অনেকেই সুরক্ষিত নয়, ওদের দুঃখে আমিও দুঃখী ও বিধ্বস্ত।”
শরিয়া আইন অনুযায়ী, মেয়েদের শিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও স্কুল, কলেজ বা মাদ্রাসা, যেখানে ছেলেরাও পড়াশোনা করে, সেখানে যাওয়ার অনুমতি নেই। ১২ বছরের উর্ধ্বে নিজের পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কোনও পুরুষের সঙ্গে কথা বলার অধিকারও নেই তাদের। নিয়ম ভাঙলেই রয়েছে কঠোর শাস্তির নিদান। প্রকাশ্যে অপদস্থ করা থেকে মৃত্যুদণ্ড, সবকিছুরই নিয়ম রয়েছে শরিয়া আইনে। আরও পড়ুন: প্রবল ভিড়ের চাপ, বিমানবন্দরে যাওয়ার পথে মৃত ৭